ক্যাচ মিস, ম্যাচও মিস

হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের সুপার টুয়েলভ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের শুরুটা জয় দিয়ে করার দারুণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। ব্যাটসম্যানরা সেরকম মঞ্চও তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু বোলার এবং ফিল্ডাররা তা কাজে লাগাতে পারেনি। ক্রিকেটের চিরকালীন প্রবাদ, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। ক্যাচ ফেলে দেওয়া মানে ম্যাচ ফেলে দেওয়া। ঠিক যেমনটি গতকাল ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। লিটন দাশের দুটি ক্যাচই যেন বদলে দিল ম্যাচের চিত্র। একসময় পিছিয়ে পড়া শ্রীলঙ্কা আবার চেপে বসে বাংলাদেশের ঘাড়ে। ফলে ৫ উইকেটের হার দিয়ে সুপার টুয়েলভ পর্ব শুরু করতে হলো বাংলাদেশকে। অথচ ১৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের ৭৯ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে একটা সময় জয়ের সুবাসও পাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষটা আর রাঙ্গানো হলো না ফিল্ডারদের ব্যর্থতায়। লিটন দাস যে দুজনের ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন সেই চারিথ আসালাঙ্কা আর ভানুকা রাজাপাকসেই ম্যাচটাকে বের করে নিয়ে গেছে জয়ের বন্দরে। সুযোগের শতভাগ কাজে লাগিয়েছেন এই দুই লঙ্কান।
অথচ টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বেশ ভালই। দুই ওপেনার লিটন এবং নাঈম মিলে ৪০ রান যোগ করে ফেলেছিল। কিন্তু ১৬ বলে ১৬ রান করে ফিরেন লিটন দাশ। বিশ্বকাপে ব্যাটটা এখনো ঠিকমত হাসেনি না লিটনের। সাকিব এসে নাঈমের সাথে যোগ দিলেও জুটিটা জমে উঠেনি। মাত্র ১০ রান করে ফিরলেন আগের দুই ম্যাচে ৪০ এর উপরে স্কোর করা সাকিব। তবে মুশফিককে নিয়ে রানের চাকা সচল করেন নাঈম শেখ। দুজন বেশ ভালই এগুচ্ছিলেন। গড়ে তোলেন ৭৩ রানের জুটি। টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তলে নেন নাঈম। বিনুরা ফার্রার্‌েডাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরেন নাঈম। তবে তার আগে ৫২ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৬২ রান করে ফিরেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এজুটি ভাঙ্গার পর আফিফ হোসেন এসেছিলেন পাঁচ নম্বরে। কিন্তু তার ব্যাটও হাসেনি, ফিরলেন ৭ রান করে। তবে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। প্রায় ২৩ মাস এবং ১১ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি পেলেন মুশফিক। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর দিল্লীতে ভারতের বিপক্ষে ৬০ করেছিলেন মুশফিক। গতকাল খেললেন ৫৭ রানের আরেকটি ইনিংস। ৩৭ বলের ইনিংসটিতে ৫টি চার এবং ২টি ছক্কার মার ছিল। শেষে মাহমুদউল্লাহর ৫ বলে ১০ রানের সুবাধে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ।
১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে প্রধম ধাক্কাটা দেন টুর্নামেন্টে প্রথম খেলতে নামা নাসুম আহমেদ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে স্ট্যাম্প ভাঙেন কুশল পেরেরার। শুরুর ধাক্কা দারুণভাবে সামলে নেন পাথুম নিশাঙ্কা আর চারিথ আসালাঙ্কা। দ্বিতীয় উইকেটে তাদের ৪৫ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো জুটিতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। নবম ওভারে এসে জোড়া আঘাতে টাইগারদের ম্যাচে ফেরান সাকিব আল হাসান। সাকিব চার বলের ব্যবধানে তুলে নেন ২ উইকেট। ওভারের প্রথম বলে সাকিব বোল্ড করেন পাথুম নিশাঙ্কাকে। ২১ বলে ২৪ রান করেন তিনি। চতুর্থ বলে তার শিকার আভিষ্কা ফার্নান্ডো। রানের খাতা খুলতে দেয়নি তাকে সাকিব। সাকিবের জোড়া আঘাতের পর এবার আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। ৬ রান করা হাসারাঙ্গাকে ফেরান নাঈমের ক্যাচে পরিণত করে। দশম ওভারে ৭৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এরপরই ভুলের মাশুল দিতে হয় টাইগারদের। ইনিংসের ১২.৩ ওভারে আফিফ হোসেনের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন রাজাপাকসে। কিন্তু সহজ সে ক্যাচটি নিতে পারেননি লিটন দাশ। তখন রাজাপাকসে ছিলেন ১৪ রানে। মোস্তাফিজুর রহমানের করা ১৪.৩ ওভারে ডিপ কভারে ক্যাচ দেন আসালাঙ্কা। সেটিও হাত ফস্কে যায় লিটনের। ৬৩ রানে ছিলেন তখন আসালাঙ্কা। ওই দুই ক্যাচ মিসের পরই ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কান জুটি। জীবন পেয়ে আসালাঙ্কা আর রাজাপাকসে ৫২ বলে ৮৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারে নাসুম ফিরিয়েছেন রাজাপাকসেকে। তবে ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ৩১ বলে ৫৩ রান করে বোল্ড রাজাপাকসে। আর ৪৯ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন আরেক জীবন পাওয়া ব্যাটসম্যান আসালাঙ্কা। মূলত এদুজনেই ম্যাচটা কেড়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশের হাত থেকে। সাকিব এবং নাসুম ২টি করে উইকেট নিলেও দলের পরাজয় এড়াতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফ্রিদিকে ছাড়িয়ে চূড়ায় সাকিব
পরবর্তী নিবন্ধদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্তকারীদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে