আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও আশপাশের এলাকা থেকে ঘুর পথে সারা দেশে মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। পৃথক চারটি অভিযানে ৪১ হাজার ইয়াবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শুক্রবার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তেজগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের প্রধান মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কক্সবাজার থেকে সরাসরি ঢাকার পথে এখন আর মাদক আনছে না কারবারিরা। আইন–শৃক্সখলাবাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিতে তারা কক্সবাজার থেকে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি কিংবা চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর বিভিন্ন উপায়ে তারা ঢাকায় মাদকের চালান নিয়ে আসেন। ঢাকার গাবতলী, মিরপুর ও সদরঘাট এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার ইয়াবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
গ্রেপ্তাররা পাঁচজন হলেন– সাধন তনচংগ্যা (২৫), ফাতেমা (৩৫), মোছা. মমিনা বেগম (২০) মো. ইয়াকুব আলী (৪০) ও মো. নাঈম (২৪)। সাধনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মজিবুর রহমান বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য আসে, গাবতলী এলাকায় ইয়াবার একটি চালানের লেনদেন হবে। এমন তথ্যে চা বিক্রেতার ছদ্মবেশে সেখানে অবস্থান নেয় অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মকর্তারা। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সাধনকে গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে নারীদের পেটিকোট পায়া যায়, তার পকেটে ছিল ১১ হাজার ইয়াবা, যেগুলো ঠাকুরগাঁওয়ের মাদক ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহের কথা ছিল।
সাধন টেকনাফ থেকে সরাসরি ঢাকায় আসেননি জানিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মজিবুর বলেন, তিনি টেকনাফ থেকে রাঙামাটি চলে গিয়ে সেখান থেকে ঢাকায় আসেন। তেমনিভাবে অনেকে টেকনাফ থেকে রাঙামাটি, সেখান থেকে খাগড়াছড়ি এবং এরপর সেখান থেকে বাসে ঢাকায় মাদক নিয়ে আসে। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টেকনাফের একটি চক্র চাঁদপুরে অবস্থান করে আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নৌপথে ঢাকায় মাদক পাচার করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর থেকে লঞ্চে ঢাকার সদরঘাটে এসে গ্রেপ্তার হন ফাতেমা ও মমিনা বেগম। তাদের কাছে ৪ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। তারা টেকনাফ থেকে প্রথমে ইয়াবার চালান নিয়ে চাঁদপুর অবস্থান করেন। পরে লঞ্চে ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে আসেন। লাগেজের ভেতরে বিশেষ কৌশলে তারা ইয়াবা পাচার করছিলেন। একই কায়দায় এর আগে তারা ইয়াবার একাধিক চালান ঢাকায় এনেছেন। একটি চক্র পর্যটকের বেশে মোটরসাকেলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ইয়াবা পাচারে জড়িত বলেও জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মজিবুর রহমান।
গ্রেপ্তার ইয়াকুব আলী দীর্ঘদিন ধরে ওই কায়দায় ঢাকার মিরপুর ও দেশের উত্তরবঙ্গে ইয়াবা পাচার করে আসছিলেন জানিয়ে মজিবুর রহমান বলেন, তার মাদক চোরাচালানের কৌশল একটু ভিন্ন। টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে তিনি সরাসরি নিজেই মাদকদ্রব্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রথমে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অবস্থান করে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে হোটেলে অবস্থান করেন।
পরবর্তীতে ইয়াবার বড় চালান নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ঢাকায় আসেন। এজন্য তার প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল রয়েছে। তার সহযোগীরা প্রাইভেটকার দিয়েপ্রথমে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলে মোটরসাইকেলযোগে ইয়াকুব ঢাকায় প্রবেশ করেন। সুযোগ বুঝে সেগুলো রংপুরেও নিয়ে যেতেন। এভাবে তিনি এর আগে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন এবং তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে সাতটি মামলা রয়েছে বলে জানান মজিবুর রহমান। এই কর্মকর্তা বলেন, কালশী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াকুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার কাছে ২৫ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে ফার্মগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাঈমকে। তার কাছ থেকে ১ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের প্রধান বলেন, আইনশৃক্সখলাবাহিনী তৎপর রয়েছে বলেই তারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। তবে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাদক কারবারিরাও নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাদক আনছে। তারা ব্যাটমিন্টনের হাতল, পেঁয়াজের ভেতরে এমনকি রান্না করা খাবারের ভেতরে পলিথিনে মুড়েও ইয়াবা আনার পথে ধরা পড়ছেন।