কোহলির জোড়া রেকর্ড, শামির ৭ উইকেট, ফাইনালে ভারত

৭০ রানে হার কিউইদের

নজরুল ইসলাম | বৃহস্পতিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের জোড়া রেকর্ড ভেঙে ম্যাচটি নিজের করে নিয়েছেন বিরাট কোহলি। ৮০তম রান নেওয়ার সময় তিনি ছাড়িয়ে যান শচীন টেন্ডুলকারকে। ২০০৩ সালের আসরে ১১ ইনিংসে ৬৭৩ রান করেছিলেন টেন্ডুলকার। ২০ বছর পর এক ইনিংস কম খেলেই তাকে টপকে গেলেন কোহলি। এরপর ১০৬ বলে পান সেঞ্চুরির দেখা। একইসঙ্গে শচীনকে তিনি ছাড়িয়ে যান আবারও। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০টি শতক এখন কেবল তার দখলে। তবে কম যান না মোহাম্মদ শামিও। শামি নিয়েছেন ৫৭ রানে ৭ উইকেট। আর এর ফলে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হলেন শামি। একই সাথে ক্যাারিয়ার সেরা বোলিংও করলেন। ক্যারিয়ারে চারবার ৫ উইকেট নিয়েছে। তবে এবার নিলেন ৭ উইকেট। আর সে সুবাধে ২৩ উইকেট নিয়ে এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক শামি। সেমিফাইনালের সেরার পুরষ্কারটিও উঠেছে এই পেসারের হাতে। ৬ ম্যাচ খেলে দলের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন এই পেসার। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গতকাল আসরের প্রথম সেমিফাইনালে কিউইদের ৭০ রানে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। ৩৯৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩২৭ রানে অল আউট হয় নিউজিল্যান্ড।

কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ভারতের রথ। সেই প্রথম ম্যাচ থেকে যে জয়ের তরী ছুটছিল ভারতের সেটি চলছেই। তামার নাম নেই। যদিও লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। কারণ সবশেষ নোঙরটা যে রোহিতের দল করতে চায় ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। সেই মাঠে যে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল। আর সে ফাইনাল জিতে তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপটা ঘরে তুলতে চায় ভারত। আর সে পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। অপরদিকে টানা তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়া হলো না নিউজিল্যান্ডের। সে সাথে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নটাও অধরাই থেকে গেল কিউইদের। গতকাল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তৃতীয় শিরোপা জয়ের পথে একেবারে শেষ ধাপে চলে গেল ভারত। এখন আর একটি ধাপ পার হতে পারলেই ১৯৮৭ এবং ২০১১ সালের ২০২৩ বিশ্বকাপটা উঠবে ভারতের ঘরে।

এবারের বিশ্বকাপে চলছে রানের উৎসব। প্রতিটা স্টেডিয়ামের উইকেট যেন রানের খনি। গতকাল ওয়াংখেড়ের উইকেটেও হয়েছে রান বন্যা। ভারতের দুই ব্যাটার বিরাট কোহলি আর শ্রেয়াশ আইয়ার তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। আর শুভমান গিল, রোহিত শর্মাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রানের পাহাড়ে চড়ে ভারত। সে পাহাড় আর টপকাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ড্যারিল মিচেল সেঞ্চুরি করে দলকে টানার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন মেঙওয়েল হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে তার দলও যেতে পারেনি ফাইনালে। ব্যাট হাতে কোহলি, আইয়ারদের ঝড়ের পর বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন পেসার মোহাম্মদ শামি। এই পেসারের আগুনে পুড়ে মরেছে কিউই ব্যাটাররা। ফলে আরো একবার হতাশা নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো গত আসরের রানার্স আপদের। অপ্রতিরোধ্য ভারত দুর্বার গতিতে ছুটে পৌঁছে গেল ফাইনালে।

মুম্বাইয়ের ব্যাটিং ট্র্যাকে টসে জিতে ব্যাট করতে নামতে মোটেও ভুল করেননি রোহিত শর্মা। শুভমান গিলের সাথে মাত্র ৮.২ ওভারে ৭১ রান করে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ২৯ বলে ৪৭ রান করে টিম সাউদির বলে ফিরেন রোহিত। মেরেছেন চারটি চার এবং চারটি ছক্কা। রোহিত ফেরার পর কোহলিকে নিয়ে রানের চাকা দ্রুত ঘুরাতে তাকেন গিল। ১৩তম ওভারে ছক্কা মেরে ভারতের রান তিন অংকে নিয়ে যান গিল। পরের ওভারে ওয়ানডেতে ১৩তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গিল মাত্র ৪১ বলে। হাফ সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন এই ওপেনার। কিন্তু ২৩তম ওভারে পায়ে ক্র্যাম্প সমস্যায় পড়ে আহত অবসর নিয়ে মাঠ ছাড়েন গিল। তার আগে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৫ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত ছিলেন গিল। কোহলির সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৮৬ বলে ৯৩ রান যোগ করেন এই ব্যাটার। এরপর কোহলির সাথে যোগ দেন শ্রেয়াস আইয়ার। এরপর ভারতের রানের চাকা আরো দ্রুত ঘুরতে থাকে। নিউজিল্যান্ড বোলারদের উপর বলতে গেলে স্টিম রোলার চালাতে থাকেন এই দুজন। ১৬৪ রান যোগ করেন দুজন তৃতীয় উইকেটে। শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫০ তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ফিরেন কোহলি। আর তাতে ভাঙ্গে এজুটি। টিম সাউদির বলে ডেভন কনওয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১১৩ বলে ১১৭ রান করে আসেন কোহলি। এই ইনিংসে তিনি মেরেছেন ৯টি চার এবং ২টি ছক্কা। এরপর কে এল রাহুল এবং শ্রেয়াশ আইয়ার মিলে যোগ করেন দ্রুত আরো ৫৪ রান। এরই মধ্যে নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন আইয়ার।

৪৯তম ওভারে দলীয় ৩৮১ রানের মাথায় ফিরেন আইয়ার। ট্রেন্ট বোল্টের বলে মিচেলকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৭০ বলে ৪টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১০৫ রান করে আসেন আইয়ার। এক সময় চারশ রানের পথে এগিয়ে যেতে থাকা ভারত শেষ পর্যন্ত থামে ৩৯৭ রানে। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ২০ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রাহুল। ইনিংসের ৫ বল বাকী থাকতে পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামেন গিল। শেষ পর্যন্ত ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৬ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ ১০ ওভারে ১১০ রান যোগ করে ভারত। নিউজিল্যান্ডের সাউদি ১০ ওভারে ১০০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট ।

৩৯৮ রানের বিশাল পাহাড়। আর সে পাহাড় ডিঙ্গাতে গিয়ে শুরুতেই মোহাম্মদ শামির আঘাত। দলের রান যখন ৩০ তখন উইকেটের পেছনে রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ১৩ রান করা কনওয়ে। এবারের বিশ্বকাপে সবচাইতে বড় চমক রাচিন রবীন্দ্রও ব্যর্থ হলেন এই গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে। নিজের পরের ওভারে এই রবীন্দ্রকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন শামি। কম্বিনেশন সেই শামিরাহুল। তিনিও করেন ১৩ রান। চাপে পড়া নিউজিল্যান্ডকে এরপর টেনে নেন কেন উইলিয়ামসন এবং ড্যারিল মিচেল। দুজন যোগ করেন ১৮১ রান। এরই মধ্যে সেঞ্চুরি তলে নেন মিচেল। কিন্তু উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন মোহাম্মদ শামি। একেবারে সীমানার কাছে কুলদিপ যাদবের ক্যাচে পরিণত হন ৭৩ বলে ৬৯ রান করা উইলিয়ামসন। একবল পর টম লেথামকেও ফেরান সিরাজ এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। এক ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে আবার চাপে নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ উইকেটে মিচেল এবং গ্লেন ফিলিপ মিলে আরেকটি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তাদের ৭৫ রানের এই প্রতিরোধ ভাঙ্গেন বুমরাহ। রবীন্দ্র জাদেজার ক্যাচে পরিণত হয়ে ফেরার আগে ফিলিপ করেন ৩৩ বলে ৪১ রান। পরের ওভারে মার্ক চপম্যানকে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন কুলদিপ যাদব। লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ড্যারিল মিচেল শেষ পর্যন্ত রনে ভঙ্গ দিলেন। মোহাম্মদ শামির পঞ্চম শিকার হয়ে ফিরলেন মিচেল। তবে ফেরার আগে ১১৯ বলে ১৩৪ রান করে এলেও সে ইনিংস দলের জয়ে কোন ভুমিকা রাখতে পারেনি। এরপর বাকিদের দ্রুত ছেটে ফেলেন মোহাম্মদ শামি। ফলে ৩২৭ রানে অল আউট হয় নিউজিল্যান্ড।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতফসিল প্রত্যাখ্যান বিএনপির
পরবর্তী নিবন্ধরেডিসনে তিন দিনব্যাপী ওয়েডিং অ্যান্ড লাইফস্টাইল এক্সপো শুরু আজ