কোরিয়ায় মা-বাবারা কেন নিজেদের বন্দি রাখছেন?

| সোমবার , ১ জুলাই, ২০২৪ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

হ্যাপিনেস ফ্যাক্টরির প্রতিটি কক্ষ থেকে বাইরের দুনিয়ায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম দরজার একটি ছিদ্র। কক্ষগুলোর ভেতর থেকে কোনো ফোন নেই, ল্যাপটপ নেই। ঘরগুলো দোকানের আলমারির মতো। ভেতরে সঙ্গী কেবল চারদিকের দেয়াল। খবর বাংলানিউজের। এসব কক্ষের ভেতরে থাকা বাসিন্দারা কারাবন্দিদের মতো নীল রঙের ইউনিফর্ম পরিধান করেছেন। তবে তারা বন্দি নন। দক্ষিণ কোরিয়ায় হ্যাপিনেস সেন্টারের কক্ষগুলোতে লোকেরা আসেন বন্দিত্বের অভিজ্ঞতা নিতে। সেন্টারে আসা লোকেদের বেশির ভাগেরই সন্তান রয়েছে। কিন্তু তারা সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছেন। পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কেমন লাগে, সেই অভিজ্ঞতা নিতেই তারা এখানে আসেন।

নির্জন বন্দিকক্ষ : নির্জন বন্দিকক্ষে থাকা বাসিন্দাদের সন্তানদের মতো নিভৃত তরুণদের হিকিকোমোরি বলা হয়। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে শব্দটি জাপান থেকে আসে। কিশোর ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতার আগ্রহকে বর্ণনা করতে শব্দটি ব্যবহৃত হতো। গত বছর ১৯ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ১৫ হাজার তরুণকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে দেখা যায়, ৫ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখছেন। জরিপ অনুযায়ী পুরো দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন পরিস্থিতিতে থাকা তরুণদের সংখ্যা হবে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার। এপ্রিল থেকে সন্তানদের বাবামায়েরা ১৩ সপ্তাহের লালনপালন শিক্ষাবিষয়ক এক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। কোরিয়া ইয়োথ ফাউন্ডেশন ও ব্লু হোয়েল রিকভারি সেন্টার কর্মসূচিতে অর্থায়ন করছে। কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো, সন্তানদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ আরও ভালো করা যায়, তা মাবাবাকে শেখানো। কর্মসূচিতে তিন দিন নির্জন বন্দিকক্ষে থাকার অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ থাকছে, তারা সন্তানদের আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন।

মানসিক কারাগার : জিন ইয়ংহায়ের ছেলে তিন বছর ধরে নিজের থাকার ঘরেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। বিচ্ছিন্ন থাকতে শুরু করার পর তিনি নিজের ২৪ বছর বয়সী ছেলের পরিস্থিতিকে মানসিক কারাগার বলে উল্লেখ করেন। ৫০ বছর বয়সী নারী বলেন, আমি কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম, কী ভুল করলামএ নিয়ে ভাবনাটাও কষ্টদায়ক। তবে যখন ভাবতে শুরু করি, তখন কিছুটা স্পষ্ট হই।

কথা বলতে অনীহা : জিন বলেন, তার ছেলে সবসময়ই মেধাবী। ছেলের ওপর মাবাবার আশা ছিল বেশি। কিন্তু ছেলে প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। বন্ধুত্ব রক্ষায় তাকে বেগ পোহাতে হচ্ছিল। তার মধ্যে খাওয়ার রোগও দেখা দেয়। এসবের কারণে তার স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর থেকে তার মনে হচ্ছিল, ভালোই করবেন। কিন্তু একদিন হঠাৎই সব পাল্টে গেল। ছেলে নিজেকে বন্দি রাখতে শুরু করলেন। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও খাবারে অনীহা মায়ের হৃদয় ভেঙে দিল। দুশ্চিন্তা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কে সমস্যা এবং শীর্ষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফল না হওয়াএসব ঘিরে ধরলেও ছেলের তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা দেখা যায়, যা ভুল। জিন যখন হ্যাপিনেস ফ্যাক্টরিতে আসেন, তিনি অন্য একাকীদের লেখা পড়তে শুরু করেন। এসব লেখা তাকে অনুভব করতে শেখায়, বুঝতে শেখায়। তিনি বুঝতে পারেন, ছেলে নীরবে থাকতে চায়, কারণ কেউ তাকে বুঝতে পারেন না। পার্ক হানসিল (ছদ্মনাম) হ্যাপিনেস সেন্টারে এসেছেন তার ২৬ বছর বয়সী ছেলের জন্য, যিনি সাত বছর আগে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কদাচিৎ তিনি ঘর থেকে বের হন। পার্ক ছেলেকে নিয়ে কাউন্সেলরের কাছে গিয়েছেন, ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু ছেলে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ভিডিও গেম খেলতে খেলতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফ্রান্সে আগাম নির্বাচন ইতিহাস গড়ার আশায় কট্টর ডানপন্থিরা
পরবর্তী নিবন্ধআরও ৫০০ কোটি ডলার দান করলেন ওয়ারেন বাফেট