চট্টগ্রামে এবার কোরবানি দাতা কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়নি। কোরবানির দিন সকাল থেকে সাড়ে ৩ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামেন আড়তদাররা। গতকাল পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ১৯ হাজার পিস পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৫৮ হাজার পিস গরু এবং বাকিগুলো ছিল মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার। তবে এ বছর চামড়া সংগ্রহে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া ছিল না মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। করোনাকালে মৃতদেহ দাফন–সৎকার কার্যক্রমে আলোচনায় আসা গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা গত বছরের মতো এবারও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।
আড়তদাররা বলছেন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এর অধিকাংশই বিনামূল্যে। এর ফলে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সুবিধা করতে পারেনি। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার আজাদীকে বলেন, গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানা, ৪৯ সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ৫৩৭টি ইউনিট কমিটির প্রায় পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক শতাধিক ছোট–বড় ট্রাকে করে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা থেকে বিপুল পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত চামড়ার একটি বড় অংশ নিজেদের ব্যবস্থাপনায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা মাঠ এবং হালিশহর তৈয়বিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদরাসা মাঠে লবণজাত করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা ৬৫ হাজার পিস চামড়া লবণযুক্ত করে সংরক্ষণ করেছি। বাকি ৪০ হাজার পিস মতো চামড়া আমরা ট্যানারি মালিকদের কাছে নগদ মূল্যে হস্তান্তর করেছি। দেশের চামড়া শিল্প রক্ষা করা এবং এই শিল্পকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটকে ভাঙার জন্য গাউছিয়া কমিটির কর্মীরা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। গত বছরের মতো এবারও সেইসব অসাধু সিন্ডিকেট সুবিধা করতে পারেনি। জানা গেছে, চট্টগ্রামে ছোট–বড় ২২৫টি আড়তে চামড়া সংরক্ষণ হয়। আড়তদার আছেন ৩৭ জন। অধিকাংশ আড়ত নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায়। কোরবানির দিন চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর থেকে বেশি কাঁচা চামড়ার আসে এখানে। ডিপোর বাইরে সড়কে লাখো চামড়ার হাতবদল হয়। হাজার–হাজার ক্রেতা–বিক্রেতার সমাগম ঘটে।
তবে কোরবানির দিন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নগরীর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের স্থান বিশেষ করে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ঈদগাহ বৌবাজার এলাকায় কাঁচা চামড়ার স্তূপ কিংবা মৌসুমি বিক্রেতার হাঁকডাক দেখা যায়নি।
চৌমুহনী বাজারের চামড়া সংগ্রহকারী মো. নাছের জানান, এক থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া তারা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় কিনেছেন। তিন লাখ টাকা বা এর বেশি দামের গরুর চামড়া কিনেছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ছাগলের চামড়ার কোনো দাম নেই। এবার কোরবানি কম হয়েছে। চামড়া খুব কম আসছে। গরু ও ছাগলের দাম বেশি ছিল। মানুষের পকেটে টাকা নেই। কোরবানি দিতে পারেনি। এবার গাউছিয়া কমিটিও চামড়া নিয়ে গেছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, এ বছর কোরবানিতে আমরা সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের টার্গেট নিয়েছিলাম। কিন্তু মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় কোরবানি দাতার পরিমাণ ১০–১৫ শতাংশ কমে গেছে শুনেছি। তাই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা ৩ লাখ ১৯ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহের হিসাব দিয়েছি। সরকার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৪৫ টাকা। ট্যানারি মালিকরা যেন সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে, সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এ বছর ৮ লাখ ৭৪ হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে গরু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।