কোরবানির সামাজিকায়ন

ছাবের আহমদ চৌধুরী | বুধবার , ৪ জুন, ২০২৫ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

আল্লাহকে খুশি করার স্বার্থে আত্মত্যাগের মহান ব্রত নিয়ে মুমিনেরা কোরবানি করে থাকে। তাহলে আমরা পায় মুমিনের আত্মত্যাগ, পশুর প্রাণ ত্যাগ। কয়েক দশক আগেও কোরবানির ঈদ ছিল আবহমান বাংলার সর্বজনের উৎসব। পঞ্চায়েত বা মুরব্বিদের উদ্যোগে মাংস সংগ্রহ ও বিতরণের কাজটি এমনভাবে করা হতো যেন উৎসবের আনন্দ থেকে কেউ বাদ না পড়ে। গ্রাম থেকে মফস্বল শহরে এটাই ছিল কোরবানির চিরচেনা দৃশ্য। তারপর তথাকথিক আধুনিকতা এবং ভোগসর্বস্ব জীবনবোধ মানুষকে ধীরে ধীরে স্বার্থপরতার বৃত্তে বন্দি করে ফেলল। ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলো থেকে হারিয়ে গেল মানুষে মানুষে সম্পর্কের উষ্ণতা, যোগাযোগ এমনকি স্বাভাবিক দেখাসাক্ষাৎও। কোরবানির মাংস বিতরণের পর্বটি দিন দিন হয়ে উঠল দায়সারা এক সামাজিকতা। অথচ কোরবানির শিক্ষা হলোএকা নয়, একসাথে; সবাইকে নিয়ে, সবার সাথে। কেননা উৎসব তখনই পূর্ণতা পায়, যখন ধনীগরিব সবার সাথে এর আনন্দ ভাগ করে নেয়া হয়। সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাদের সামর্থ রয়েছে তাদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে।

ঈদের দিন দেখা যায় চট্টগ্রামের জেল রোড এলাকায় কোরবানির মাংস কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে মাংস সংগ্রহ করে ঐ এলাকায় নিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়। আবার কোন কোন পরিবার কোরবানির মাংস ফ্রিজ ভর্তি করে সারাবছর খাওয়ার জন্য রেখে দেয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, বড় গরু কোরবানি না দিলে সমাজে মুখ দেখানো যাবে না, তারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অথবা ধার কর্জ করে হলেও বড় গরু কোরবানি দিয়ে থাকে। আমরা গ্রামের বাজার থেকে গরু নিয়ে যখন বাড়িতে যাই, বিভিন্ন লোক জানতে চায় গরুর দাম কত হয়েছে? আবার অনেকে গরু নিয়ে সেলফি তুলে। একটা গরুকে ৭ ভাগে কোরবানি দেওয়া হয়, মহল্লার মসজিদের মৌলভি সাহেব এসে প্রত্যেকের নাম ধরে গরু জবেহ্‌ করা হয়। তখন আল্লাহু আকবর আওয়াজ উচ্চারিত হয়। কোরবানির দিন সকালে গোসল করে পাক পবিত্র হয়ে সবাই আমরা নতুন কাপড় পড়ে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে যাই। সকাল ৮টায় ঈদের জামাত আরম্ভ হয়, ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তারপর বাড়িতে এসে গরু জবেহ্‌ করার পর, মাংসগুলি সাইজ করে রান্নার উপযোগী করে তুলি, কিছু মাংস ফাতেহার জন্য ঘরে দিয়ে থাকি। অন্য মাংসগুলি ৩ ভাগ করে, এক ভাগ ফকির মিসকিনদের জন্য দিয়ে দিই, আর অন্য দুই ভাগ অংশীদারের মধ্যে ভাগ করে নিই। রান্না শেষে ফাতেহা দিয়ে সবাই এক সাথে বসে রুটি দিয়ে কোরবানির মাংস খায়। এইভাবে আমাদের গ্রাম অঞ্চলে কোরবানির উৎসব পালিত হয়। কোরবানির প্রথম দৃষ্টান্তে পাওয়া যায় আদম (আঃ) এর দুই পুত্রের ঘটনা থেকে (সূরা মায়েদা: ২৭)। আল্লাহর নির্দেশ প্রতিপালনে ইব্রাহিম () তার পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন, যে ঘটনাটি আল্লাহ্‌র প্রতি সমর্পণের অতুলনীয় উদাহরণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাদকাসক্তি নাকি মাদকনির্ভরতা
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টি শেষে বৃষ্টি