ঈদুল আজহা বা কোরবানির যে সামাজিকতাগুলো আমরা করি তা অনেক সময় লোক দেখানো হয়ে যায়। যেমন ধরুন, আমার সাধ্য না থাকলেও আমাকে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গরুর রান বা পারলে গোটা গরু বা আস্ত ছাগল খাসী পাঠাতে হয়। এটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়। অনেকে আবার বুক ফুলিয়ে বলেন, গর্ববোধ করেন। কিন্তু সবার পক্ষে এ সামাজিকতা করা সম্ভব হয় না। কষ্ট হয়। আমার বাসার হেল্পিং হ্যান্ড খালা বললো, মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে দশ বছর। এই দশ বছরে প্রতিবারই কোরবানিতে তাকে মাংস পাঠাতে হয়। সে কোরবানির দিন থলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পাঁচ দশ কেজি যা পায়, পুরোটাই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হয়। এটাও কি সামাজিকতা?
কোরবানির মধ্য দিয়ে আমরা আত্মত্যাগ ও আত্মনিবেদনের শিক্ষা পাই। আত্মঅহংকার, আত্মগরিমা বিসর্জনের প্রকৃত নামই হলো কোরবানি। আসুন, কোরবানির জবাই করা পশুর মাংস গরীব আত্মীয়–স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশি ও গরীব দুঃখীদের মাঝে বিলি বণ্টনের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সহানুভূতির শিক্ষা নিই। এতে করে সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও মমত্ববোধ তৈরি হবে। হকও আদায় হবে। এমনিভাবে আমরা জবাই করা পশুর চামড়া কেউ মাদ্রাসায় দিয়ে থাকি, কেউ বা আবার বিক্রি করে যে টাকা পায়, তা গরীব দুঃখী এবং অসহায়দের হাতে তুলে দেয়। এতে করেও সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। লোক দেখানো লৌকিকতা না করে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনে হতে হবে নিবেদিত প্রাণ। কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা পাশবিক ও পশুসুলভ আচরণ বিসর্জন দিয়ে মানবিক গুণে গুণান্বিত হতে হবে।