কোরবানির পশু বিক্রি শুরু আজ

নগরে বসছে ১৩ হাট মনিটরিংয়ে ৬৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ২৯ মে, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে এক বছরের ব্যবধানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা হৃষ্টপুষ্ট করা গরুছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা বেড়েছে ৮ হাজার ৫২৩টি। এরপরও স্থানীয় উৎপাদনে মিটবে না এবারের কোরবানি পশুর চাহিদা। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা পশুর ওপর নির্ভর করতে হবে চট্টগ্রামের কোরবানিদাতাদের। অবশ্য গত বছরও (২০২৪) স্থানীয় চাহিদার বিপরীতে উৎপাদনে ঘাটতি ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্যান্য অঞ্চল থেকে কোরবানিযোগ্য পশু আসায় বাজারে সংকট ছিল না। তাই গতবারের ধারাবাহিকতায় এবারও সংকট সৃষ্টি হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলার ২২৮টি স্থায়ীঅস্থায়ী পশুর হাটে আজ বৃহস্পতিবার থেকে কোরবানি পশু বিকিকিনি শুরু হবে। এবার নগরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় ১৩টি স্থায়ীঅস্থায়ী হাট বসবে। গত কয়েকদিন ধরে বাজারগুলোতে শামিয়ানা টাঙ্গানোসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ইজারাদাররা। এছাড়া গতকালও বৈদ্যুতিক সংযোগ, মাঠ পরিষ্কার ও খুঁটি স্থাপনসহ নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন তারা।

ঘাটতি থাকলেও সংকটের ভয় নেই : চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। গতবার (২০২৪) এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। ওই হিসেবে এবার ৮ হাজার ৫২৩টি বেশি গবাদিপশু উৎপাদিত হয়। কিন্তু এরপরও স্থানীয় উৎপাদনে চাহিদা মিটবে না। কারণ এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে এবার ঘাটতি আছে ৩৫ হাজার ৩৮৭টি কোরবানি পশুর।

তবে চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন কম হলেও শেষ পর্যন্ত পশুর সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। একই কথা বলেছেন পশুর হাটের ইজারাদার ও বেপারিরাও। তারা বলছেন, প্রতিবছর চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদনে ঘাটতি থাকে। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পড়ে না। যেমন গতবার (২০২৪) চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে ঘাটতি ছিল ৩৩ হাজার ৪০৬টি কোরবানি পশুর। এর আগে ২০২৩ সালে চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫৪৮টি কোরবানি পশুর। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু আসায় গত দুইবছরই সংকট দূর হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর আজাদীকে বলেন, প্রতিবছর চট্টগ্রামের কোরবানি পশুর হাটগুলোতে কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে আসেন বেপারিরা। পার্বত্য জেলাগুলো থেকেও গরু আসে। তাই স্থানীয় উৎপাদন কম হলেও এবার কোরবানি পশুর সংকট হবে না। বরং চাহিদা মিটিয়ে আরো উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। ‘এবার কোরবানি পশুর দাম কেমন থাকতে পারে’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু পশুর সংকট হবে না তাই দাম খুব বাড়বে না। আশা করছি সহনীয় থাকবে।’

গরুর সংখ্যা বেশি : জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা হৃষ্টপুষ্ট করা কোরবানি পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যাই বেশি। এবার মোট উৎপাদিত কোরবানি পশুর মধ্যে গরু আছে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। এছাড়া ৬৪ হাজার ১৬৩ টি মহিষ, ২ লক্ষ ৫১ হাজার ৭৪টি ছাগল এবং ৫৫ হাজার ৬৯৭টি ভেড়া রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর মধ্যে নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ২০ হাজার দুইটি, ডবলমুরিং থানায় ১০ হাজারটি এবং কোতোয়ালী থানায় চার হাজার ৩৩১টি গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলায় ৪৮ হাজার ১২৪টি, চন্দনাইশে ৪৮ হাজার চারটি, আনোয়ারায় ৬৫ হাজার ২১১টি, বোয়ালখালীতে ৩১ হাজার ১৬০টি, পটিয়ায় ৭৮ হাজার ৭৯১টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৬২৯টি, মীরসরাই উপজেলায় ৬০ হাজার ৭৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৫৯ হাজার ২১৩টি, হাটহাজারীতে ৪৮ হাজার ২৮০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫১ হাজার ৮১৪টি, ফটিকছড়িতে ৭৮ হাজার ৫৩০টি, লোহাগাড়ায় ৪০ হাজার ৬২টি, রাউজানে ৩৫ হাজার ৭০১টি, বাঁশখালীতে ৬২ হাজার এবং সন্দ্বীপে ৮৫ হাজার ২৫০টি গবাদিপশু রয়েছে।

নগরের বসবে ১৩ হাট : জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় এবার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২২৮টি কোরবানি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ৭৫টি স্থায়ী এবং ১৫৩টি রয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট। এবার সর্বোচ্চ ২৩টি কোরবানি পশুর হাট বসবে হাটহাজারী উপজেলায়।

এদিকে নগরে পশুর হাট বসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায়। সংস্থাটি এবার ১০টি অস্থায়ী পশুর হাটে ইজারাদার নিয়োগ দেয়। এর সঙ্গে আছে তিনটি স্থায়ী হাট। অর্থাৎ নগরে ১৩টি স্থায়ীঅস্থায়ী হাট বসছে এবার। এর মধ্যে স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছেসাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।

অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ, ৩৭নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের মুনিরনগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গা, ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের গলাচিপাপাড়া বারানিঘাটা রোড সংলগ্ন মাঠ, ৪১ নং ওয়ার্ডের চরপাড়া আলমগীর সাহেবের মাঠ, ৪১ নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাইপার্কের উত্তরে চেয়ারম্যান মাঠ, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল এলাকার খালপাড় অস্থায়ী পশুর বাজার, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন খালি মাঠ ও ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের ধুমপাড়া সাগরপাড় লিংক রোডসংলগ্ন রেজাউল আমিন মাঠ।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নগরের বাইরে উপজেলার স্থায়ীঅস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে মীরসরাইয়ে ২০টি, সীতাকুণ্ডে ১৫টি, সন্দ্বীপে ২০টি, ফটিকছড়িতে ২০টি, রাউজানে ১৬টি, রাঙ্গুনিয়ায় ২০টি, হাটহাজারীতে ২৩টি, বোয়ালখালীতে ১১টি, পটিয়ায় ১০টি, চন্দনাইশে ১৩টি, আনোয়ারায় ১৫টি, সাতকানিয়ায় ১৮টি, লোহাগাড়ায় ৭টি, বাঁশখালীতে ১২টি এবং কর্ণফুলীতে ২টি স্থায়ীঅস্থায়ী হাট বসবে। এদিকে নগর ও উপজেলার কোরবানি পশুর হাটগুলোর মনিটরিংয়ের জন্য ৬৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাম গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলা, আহত ১২
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদুল আজহা আগামী ৭ জুন