কোরবানির পশুর বাজার : অহেতুক দাম বাড়ানোর চেষ্টা রুখে দিতে হবে

| মঙ্গলবার , ২০ জুন, ২০২৩ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের মানুষ। ঈদুল আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে পালিত হয় এই উৎসব। তবে কোরবানির পশু নিয়ে কোনো সংকট হবে না বলছে সরকার। দেশের পশু দিয়েই মেটানো যাবে কোরবানির পশুর চাহিদা। দেশের অভ্যন্তরে খামারিরা যে পশু উৎপাদন করেছে তা দিয়েই আমাদের কোরবানির চাহিদা মেটানো সরকারের লক্ষ্য বলেও জানানো হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিবছর পশু কোরবানির সংখ্যা ৫১০ ভাগ হারে বেড়েছে। একপর্যায়ে কোরবানির সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়। তবে করোনাভাইরাস মহামারি, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিক সংকট দেখা দিলে কোরবানির সংখ্যা কমে যায়। ২০২০ সালে কোরবানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কমে যায়। ২০২১ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯১ লাখ। ২০২২ সালে ৯৯ লাখ ৫৫ হাজারটি পশু কোরবানি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৪ বছরের তুলনায় এবার হাটে আরও বেশি কোরবানির পশু উঠবে। তবে দাম কিছুটা বাড়তি থাকবে। কারণ প্রতিটি পশু খাদ্যের দাম আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। পশু লালনপালন করতে গিয়ে খরচও বেশি পড়ছে। দেশে এখন ওষুধ বা তথাকথিত ভিটামিন ট্যাবলেট দিয়ে গরু মোটাতাজা করানো হয় না। প্রাকৃতিক ও অনুমোদিত খাদ্যে পশু পালন করা হচ্ছে। ক্রেতারা এখন যেমন সচেতন খামারিরাও তেমনি সচেতন। প্রাকৃতিক খাদ্যে পশু পালনে লাভ বেশি। ঝুঁকিও থাকে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশে কোরবানির পশুর কোনো সংকট নেই। বরং উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরুমহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগলভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। তিনি জানান, এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসাবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর কোরবানির হাটে কোনোভাবে রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে গত বছরের মতো এবারও সারা দেশে পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, অন্যসব বছরের মতো এবারও রেলে কোরবানির গবাদিপশু পরিবহন করা হবে। এ ক্ষেত্রে রেল বিশেষ সুযোগ দেবে। কম খরচে পশু পরিবহনের সুযোগ করে দেবে। দেশের সর্বত্র যাতে কোরবানির পশু পর্যাপ্ত থাকে সে অনুযায়ী পশু পরিবহনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

১৪ জুন সচিবালয়ে আসন্ন ঈদুল আজহা ২০২৩ উপলক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ পরিবহন নিশ্চিত করা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এ কথা জানান তিনি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত পথে যাতে অবৈধভাবে গবাদিপশু আসতে না পারে সে জন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটাই হচ্ছে মূল কাজ। যেহেতু দেশে এবার কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে, সেহেতু যে কোনো মূল্যে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে চোরাচালান। তবে দাম বৃদ্ধির যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তা রুখে দিতে হবে। দৃষ্টি দিতে হবে সেখানে, যেন বাজারে অহেতুক দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা না হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে