নতুন করোনাভাইরাসের টিকাটি একদম নতুন। এ কারণে টিকা প্রয়োগের পর কী কী সমস্যা হতে পারে, তাও অজানা। তবে এই রোগের কোনো ওষুধ না থাকায় ঝুঁকি থাকলেও তা টিকা প্রয়োগের প্রস্তাব উঠে এসেছে এক আলোচনায়। ‘কোভিড-১৯ টিকা : কে, কখন, কিভাবে পাবে’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা টিকা আমদানি ও প্রয়োগে বেসরকারি খাতকেও যুক্ত করার আহ্বান জানান।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম রোববার ভার্চুয়াল এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোস্তাক রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, নতুন করোনাভাইরাসের টিকার প্রয়োগ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে একটি নতুন বিষয় হবে। এ কারণে এতে জনগণের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তবে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। ভ্যাকসিনের বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এজন্য এখনই চিন্তা করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং সিভিল সোসাইটিকে যুক্ত করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিট উদ্ভাবক ড. বিজন শীল বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে টিকাটি কাকে দেওয়া যাবে, সেটি আগে চিহ্নিত করতে হবে। যারা আক্রান্ত হয়ে গেছেন, শুরুতে তাদের টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যাদের অ্যান্টিবডি নেই, পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে এই টিকা দিতে হবে।
টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, টিকার এখন পর্যন্ত কোনো বিকল্প হয়নি। এ কারণে ঝুঁকি নিতেই হবে। একটা ভ্যাকসিন ভালো কি খারাপ, ১০ মাসের স্টাডিতে বলা যায় না, কমপক্ষে ৫ বছর সময় লাগে। এই টিকা দিতে গিয়ে ভবিষ্যতে নানা সমস্যা আসতে পারে। যেহেতু এখন পর্যন্ত বিকল্প নাই, এ কারণে এটা গ্রহণ করা যেতে পারে।
টিকা প্রয়োগের অগ্রাধিকার তালিকায় তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন বিজন কুমার শীল। আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডা. ফেরদৌসী কাদরি বলেন, অনেক সময় একটি রোগের টিকা আবিষ্কার হতে ১ বছর থেকে ১০০ বছরও লাগে। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া গেছে ১০ মাসের মধ্যে। এ কারণে এই ভ্যাকসিন ব্যবহারে কিছুটা ঝুঁকি থাকবে। নতুন ভ্যাকসিন বলে পৃথিবীর সব দেশ এই ঝুঁকি মোকাবেলা করছে। আমাদের সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। ভ্যাকসিন না নিলে বুঝতেও পারব না, সমস্যাটা কোথায়। আমাদের কোনো বিকল্প নেই, এ কারণে আমাদের এটা নিতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ নিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা ও দুর্বৃত্তায়ন হবে। এখন যাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তারা না পেয়ে ক্ষমতাবানরা প্রথম টিকা পাবে। আমরা প্রাধান্য যাদের দিচ্ছি তারা পাবে না। টিকা প্রয়োগে বেসরকারি খাততে যুক্ত করার পরামর্শ দিলেও তিনি বলেন, যাদের টাকা আছে, তারা বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন নিয়ে নেবে।
নতুন করোনাভাইরাসের টিকার সঙ্গে অনেক ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক বিষয় জড়িত থাকতে পারে। এ কারণে এটি নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে বলে মত দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা। তিনি বলেন, প্রতিরোধটা অনেক বেশি জরুরি। এই মুহূর্তে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সোশ্যাল ডিস্টেন্স বজায় রাখা জরুরি। ভ্যাকসিন দিয়ে কলেরা রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়নি।
আলোচনায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাতসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।