কোভিড পরিস্থিতি দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে

| সোমবার , ১২ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

গতকাল ছিল বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ১৯৯০ সালের ১১ জুলাই প্রথমবার ৯০টি দেশে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ বছর বাংলাদেশ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করেছে অনানুষ্ঠানিকভাবে। অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, বেকারত্ব, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ইত্যাদি সমস্যার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে এ দিবস পালিত হয়। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে দিবস পালন এখন কেবল কর্মসূচি উদযাপন। আমরা জানি, করোনা মহামারি শুরুর পর স্বাস্থ্যসেবায় ধস নেমেছে। এর প্রভাবে এরই মধ্যে দেশে স্বল্পমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ কমে গেছে ২৫ শতাংশ। আর দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণ নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। এ সময়ে নারী ও কিশোরীদের সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি চলমান থাকলে এবং লকডাউন পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘ হয় তাহলে নিম্ন-মধ্যম ও নিম্ন আয়ের ১১৪ দেশে ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি থেকে বঞ্চিত হবেন। আর অতিরিক্ত ৭০ লাখ নারী অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হবেন। প্রতিবেদন অনুসারে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বাল্যবিবাহের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বিশ্বে ১৩ মিলিয়ন (১ কোটি ৩০ লাখ) বাল্যবিবাহ হবে। এর মধ্যে ৮ মিলিয়ন (৮০ লাখ) বাল্যবিবাহ হবে শুধু বাংলাদেশে। যেখানে বাল্যবিবাহের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। তবে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। অনেকের মতে পৃথিবীর যা সম্পদ রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি লোককে জায়গা দেওয়া সম্ভব। তাদের মতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। কেবল এ ভাবেই প্রকৃতির ওপর যে নির্যাতন চলছে তা বন্ধ করা যাবে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নত বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত চীন এক সন্তান নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। আবার কিছু দেশ ঋণাত্মক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কারণে উল্টো নীতিও গ্রহণ করেছে।
এখানে উল্লেখ্য, প্রায় ৬৮০ কোটি জনসংখ্যার পৃথিবীতে জনসংখ্যায় শীর্ষ চীন, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এক লাখ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত সত্তর বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮ অনুযায়ী বতর্মান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ যেখানে জনসংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিবেশী দেশ ভারতের গড় প্রজনন হার ২ দশমিক ১ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর থেকে পৃথিবীর মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৬ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে আর সবচাইতে বেশিদিন বাঁচে জাপানের মানুষ। জাপানের মানুষের গড় আয়ু ৮৩ দশমিক ৮৪ বছর যেখানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৭৩ বছর। জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বাড়লেও বিপুলসংখ্যক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, কমর্সংস্থান ও বাসস্থানের সুবিধা।
ইউএনএফপিএ-র বার্ষিক বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০১৯-এ বলা হয়েছে, ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ১০ কোটি ৪৭ লাখ। বছরে ১ দশমিক ১ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮১ লাখ। এতে আরও বলা হয়েছে, দেশে ৫০ শতাংশ মা প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা পান না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ সবচেয়ে বেশি। চাহিদা থাকার পরও ১১ শতাংশ নারী প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পান না।
অস্বীকার করছি না যে পৃথিবীর সব সম্পদের সেরা সম্পদ হচ্ছে জনসম্পদ। মানুষ তার নিজস্ব শক্তি ও মেধার বলে বিশ্বসভ্যতার অবিশ্বাস্য উন্নয়ন সাধন করেছে, বদলে দিয়েছে পৃথিবীর চেহারা। অনেকেই মনে করেন, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রযুক্তি ও উৎপাদনশীলতার যে বৃদ্ধি ঘটেছে, তাতে সব মানুষের কাজ ও খাদ্যের সমস্যার সমাধানটা কোনও সমস্যা হওয়া উচিত নয়। যা প্রয়োজন, তা হল উৎপাদনের উপকরণের উপর সব মানুষের অধিকার। বর্তমান সমাজের অর্থনীতির নিয়মই এমন যে অনেক সময়ই অতি উৎপাদিত পণ্য রাখতে না পেরে নষ্ট হয়ে যায়, অন্যদিকে খাদ্যাভাবে মৃত্যু হয় অনেকের। তাদের মতে জনসংখ্যা কখনওই সমস্যা নয়, এটি হলো সম্পদ। তবে বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা সম্পদ ঠিক আছে, কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যা অবশ্যই বোঝা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে