করোনাভাইভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের উপধরন জেএন.১ পৌঁছে গেছে বাংলাদেশেও। এ ধরনটি দ্রুত ছড়ালেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান– আইইডিসিআর।
এ সংস্থার পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর এবং চলতি জানুয়ারি মাসে কোভিড আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের শরীরে জেএন.১ উপধরনটির সংক্রমণ মেলে। তাদের কেউ বিদেশ থেকে আসেননি, দেশের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরের রোগীও আছেন। খবর বিডিনিউজের।
অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, নতুন এই ধরন নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটার উপসর্গ সাধারণ সর্দিকাশি, জ্বরের মত। তবে বয়স্ক এবং যাদের কোমর্বিডিটি (নিয়াময় অযোগ্য বা দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগ) আছে তাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন জেএন.১–এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশেই জেএন.১ এর প্রকোপ দেখা যায়।
জেএন.১ ধরনটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে থাকায় এই উপধরনকে আলাদাভাবে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অফ ইন্টারেস্ট’ (ভিওআই) শ্রেণিভুক্ত করে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি বলছে, আপাতত এই উপধরনটি জনস্বাস্থ্যের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ বলেই ধারণা পাওয়া গেছে। আগের উপধরনের চেয়ে এটি বেশি ক্ষতিকরও নয়।
বাংলাদেশেও কয়েকদিন ধরে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ছিল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বিশ্ব জুড়ে এই ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্রের মত জায়গা এবং এই রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন এমন ব্যক্তিদের মাস্ক ব্যবহার ও কোডিভের টিকার চতুর্থ ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দ্রুত টিকা দেওয়ার নির্দেশ : এদিকে বাসস জানায়, দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলেও দ্রুত টিকা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স বিভাগের সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফাইজার কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমের ১ম, ২য় এবং বুস্টার ডোজ (৩য়, ৪র্থ ডোজ) বিতরণ এবং প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরিই কোভিড–১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের ৮টি কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ অর্থাৎ ৩য় এবং ৪র্থ ডোজ ফাইজার ভিসিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পরের ধাপে ঢাকার বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও সরকারি হাসপাতাল, ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন বিতরণের মাধ্যমে কোডিড–১৯ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, ৬০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব) জনগোষ্ঠী ও গর্ভবতী নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। ১ম এবং ২য় ডোজ টিকা পাবার প্রমাণস্বরূপ ভ্যাকসিনের নাম এবং তারিখ উল্লেখপূর্বক কোভিড–১৯ টিকাদান কার্ড সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে প্রদান করা হবে। ৩য় এবং ৪র্থ ডোজ টিকার ক্ষেত্রে সুরক্ষা ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ থেকে টিকাকার্ড ডাউনলোড করে সাথে আনতে হবে; এমআইএস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পূর্ব নির্ধারিত উপায়ে কোভিড–১৯ ভ্যাঙিনেশনের রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।