কোনো মহলের ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৩ মার্চ, ২০২৫ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে। কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়ে পাঠানো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালার কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। আজ সোমবার কমিশনের কাছে মতামত জমা দেওয়ার সময়ে এ বিষয়ে দলের বক্তব্যও জানাবে দলটি।

ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের অবস্থা ও কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্যবিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায়, যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সকল বিষয়গুলো যেন একটি পূর্ব পরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা বলা মুশকিল। সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, রাজনীতিবিদরা অপাঙক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

২০২৪ সালের জুলাইআগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। তার মধ্যে বিএনপিসহ অর্ধেক দল এখনো তাদের মতামত দেয়নি। তবে বিএনপি সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

কী কী বিষয়ে প্রশ্ন এবং কোন কোন রাজনৈতিক দলের বক্তব্যবিবৃতির সাথে মিল পাওয়া তা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনেকগুলো জিনিস বুঝতে পারছেন। তাদের প্রস্তাবগুলো যেটা কমিশনের, তার অনেকগুলো মিডিয়াতে চলেই এসেছে। সেখানে দেখবেন যে, ওই রাজনৈতিক দলগুলোর বা ব্যক্তির প্রস্তাব অনেকটাই একই রকম আসছে। স্পেসিফিক এখন আমি বলতে চাচ্ছি না। আগামীকাল আমাদের যে টিম যাবে সেই টিম কথাবার্তা বলার পরে আপনাদের সাথে তারা কথা বলবেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক ঐহিত্য, কৃষ্টি, এবং সংস্কৃতি ও ধর্মবোধ এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই বিভিন্ন সংস্কার ও সাংবিধানিক সংশোধনী প্রণীত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়ন করার প্রস্তাব : মির্জা ফখরুল বলেন, সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সমস্ত কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকাণ্ডের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব আন্ডারমাইনিং করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য। যার ফলশ্রুতিতে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ন্যাশনাল কন্টিটিউশনাল কাউন্সিলএনসিসি নামে একটা ফ্রেমের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে সমস্ত স্তরে স্তরে দেখা যায় অনির্বাচিত বিভিন্ন ব্যক্তিরা এই সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন এবং সাংবিধানিকভাবে তাদেরকে ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির আর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী রাষ্ট্রের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হবে যদি এগুলো গৃহীত হয়।

ঐকমত্য কমিশনের প্রেরিত স্প্রেডশিট নিয়ে প্রশ্ন : মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে যে অপশন পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে, তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারত তা প্রস্তাব না রেখে লিডিং কোয়েশ্চন আকারে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কিনা, হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা। একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসাবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কিনা ইত্যাদি।

তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো। একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি স্প্রেডশিটের সাথে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।

চার্টার অব রিফর্ম তৈরি হতেই পারে : বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কার আগে না নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে না সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবাশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সাথে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা। নির্বাচিত সরকার জনগণের কাঙ্ক্ষিত ঐকমত্যের সংস্কারসমূহ সম্পন্ন করবে। কেননা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং ন্যায় বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব।

কোনো কোনো উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন : মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষপরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমান ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা
পরবর্তী নিবন্ধকমিশন প্রস্তাবিত সাংবাদিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করবে সরকার : তথ্য উপদেষ্টা