বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো ব্যবসায়ী বা পেশিশক্তির কাছে দায়বদ্ধতা নেই। এ সরকারের দায়বদ্ধতা আছে জুলাই অভ্যুত্থানে ১ হাজারের বেশি শহীদ, ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়ে যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ও অগণিত ছাত্র–জনতার প্রতি। এ দায়বদ্ধতা থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে নগরীর সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরো বলেন, কর্ণফুলী টানেল আমাদের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটার পাশ দিয়ে আসার সময় দেখলাম সেখানে কোনো গাড়ি নেই। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর করে তার সাথে সংযোগ সড়ক হয়ে একটা ইকোনমিক জোন তৈরি করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন দেখেন সেখানে একটা বিদ্যুৎ প্রকল্প হয়েছে আর এখানে একটা টানেল তৈরি করা হয়েছে যা অপরিকল্পিত পরিকল্পনার একটা অংশ। ফলে দেশ এখন টানেলের লোকসান বয়ে বেড়াচ্ছে।
জ্বালানি উপদেষ্টার ইস্টার্ন রিফাইনারি পরিদর্শন : এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দুপুরে পতেঙ্গাস্থ ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের প্ল্যান্ট পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।
মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি তেল শোধনাগার ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। বর্তমানে এটা খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এটা ভেঙে যেতে পারে। দ্বিতীয় আরেকটা রিফাইনারি তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং অতি দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, বাপেক্সের এক–একটি গাড়ির দাম ৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আবার জ্বালানি খাতে সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তূকি দিতে হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ করা হয়েছে যার বার্ষিক রাজস্ব আয়ের কথা ছিল ১৪শ কোটি টাকা। কিন্তু ৬ মাস পরে গিয়ে জানতে পারলাম মাত্র ৩৭ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছে। এগুলো উন্নয়নের নামে অপচয় করা হয়েছে। আমি কর্মকর্তাদের সাথে বসেছি যাতে অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে দেশের টাকা অপচয় করা না হয়। কারণ অপচয় করার মত অবস্থা এখন আমাদের নেই।
বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’র প্রতিনিধি মেজর মাহমুদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। এ সরকার কোনো ক্ষমতা গ্রহণ করেনি, শুধুমাত্র ছাত্র–জনতার অনুরোধে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দায়িত্ব গ্রহণ করলে সে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবসময় সর্তক থাকতে হয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ দায়িত্বকে আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তা রক্ষার্থে সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। সাধারণ জনগণ আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে আমরা দেশের সম্পদকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করি। কিছুদিন আগে বাড্ডায় এক মহিলা অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় গাড়ির আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা খবর পেয়ে সড়ক বিভাগের সহকর্মীদের নিয়ে সেখানে যাই এবং বাস চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না তবুও আমরা দায়বদ্ধতা থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ দিই।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে দুই জোড়া ট্রেন চালুর দাবি মেয়রের : চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেনের চাহিদা সীমাহীন। যাত্রীরা টিকিট চেয়ে টিকিট পান না। এই রুটে দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা গেলে চট্টগ্রামের মানুষের পর্যটন নগরীতে যাতায়াত সহজ হবে। এতে রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়বে। চট্টগ্রামের মানুষ সহজে পর্যটন নগরী যেতে পারবেন। চট্টগ্রামবাসী আপনাকে কৃতজ্ঞতার সাথে মনে রাখবেন।
অপরদিকে আগ্রাবাদের ঢেবার পাড়; এটা অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী একটা জায়গা। অন্য সিটি কর্পোরেশনে আমি দেখেছি তারা কিভাবে একটা দীঘিকে চমৎকার ওয়াকওয়ে করেছে। সন্ধ্যাকালীন সেখানে সবাই কথা বলছে, আড্ডা মারছে। মানুষ শ্বাস নেওয়ার জায়গা সেখানে পাচ্ছে। ওই চট্টগ্রামের ঢেবার পাড়ে রেলের জায়গা কিছু লোক দখল করে রেখেছে। আমি আপনাকে স্পষ্ট বলতে চাই আমাদের সাথে একসাথে কাজ করে দেখেন যদি একটা দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে সেখানে করা যায়, একটা পার্ক যদি করা যায়। আগ্রাবাদ এলাকার মানুষ কোথাও হাঁটতে পারে না, ঘুরতে পারে না। সেখানে আমরা টাস্কফোর্স করে, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী সবাইকে একসাথে ইনভলভ করে দখলদারদের বের করে দিয়ে সেখানে একটা দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে করতে পারি। ইভেন আজকে পলোগ্রাউন্ডের মাঠ দেখেন এমন একটা অবস্থা। এটাও আপনাদের রেলের। কিন্তু সেখানে সারা বছর ভ্যারাইটি শো, ডান্স– এগুলো চলতে থাকে। আমার মনে হয় আমাদের খেলার মাঠ নেই। ছেলেরা খেলতে পারে না। ওই মাঠটা শুধু খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চাই। এখানে ভ্যারাইটি শো, বিভিন্ন মেলার নামে যেগুলো চলে সেগুলো আসলে মানুষ পছন্দ করে না। যানজট লেগে থাকে সারাক্ষণ। মেয়র এই বিষয়গুলো উপদেষ্টাকে ভেবে দেখার অনুরোধ জানান।