চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আজকে আমাদের সামনে যে জুলাই–অগাস্ট বিপ্লব–যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়বার, আমরা সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। একটা স্লোগান দিয়েছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব (তারেক রহমান)- ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। এটার অর্থ কী? এটার অর্থ আমরা কারো কাছে মাথানত করব না, আমরা অন্য কোনো দেশের দিকে তাকিয়ে থাকি না। গতকাল সোমবার সকালে শাহবাগ চত্বরে যুবদলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, আজকে যারাই চেষ্টা করুন না কেন– বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করে আমাদেরকে (বিএনপি) বেকায়দায় ফেলার জন্য, সেই চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না। এই দেশের মানুষ লড়াই করেছে, লড়াই করতে জানে, লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছে, লড়াই করে গণতন্ত্র রক্ষা করেছে এবং দেশকে মুক্ত করেছে। খবর বিডিনিউজের।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যুবদল আয়োজিত ‘গ্রাফিতি অঙ্কন’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ফখরুল। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব নিজে রংতুলি নিয়ে ক্যানভাসে গ্রাফিতি আঁকার মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
জনগণ কী ভাবছে :
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা প্রতি মুহূর্তে সংস্কারের কথা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন– ইনডাইরেক্টিলি যে, আমরা কমপ্রোমাইজ করছি না, কথাগুলো সঠিক নয়। আমরা সারাক্ষণ এই সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতা করছি, আমরা সারাক্ষণ সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।
হাসিনার বিচার শুরু হলো না কেন :
প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, কোথায় হাসিনার বিচার তো এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কিছু দেখতে পেলাম না। একবছর হয়ে গেল, হাসিনার বিচার কাজ শুরু হলো না কেন?…বিবিসির প্রতিবেদনে অডিওতে দেখাচ্ছে যে, হাসিনা নির্দেশ দিয়েছে– ‘গুলি করো’; এগুলো কেন এখন পর্যন্ত আসেনি। প্লিজ এই বিষয়গুলোকে আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা দয়া করে সামনে নিয়ে আনেন। এই সাংবাদিকরা আপনারা অত্যন্ত ভালো কাজ করেছেন, অনেক কিছু দিয়েছেন, অনেকে এই আন্দোলনের শহীদ হয়েছেন, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অধিকারের আন্দোলনে মানুষের আপনারা পাশে দাঁড়িয়েছেন, লড়াই করেছেন। আমরা এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে তর্ক–বির্তক করছি, এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলে লিপ্ত হয়েছি– যা বাংলাদেশকে আরও পিছিয়ে ফেলে দিতে পারে। ফ্যাসিস্টদের শক্তি যোগাতে পারে, ফ্যাসিস্টদের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে– আবার নতুন করে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসার।
বিএনপি কাউকে মুচলেকা দেয়নি :
আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিপীড়ন–নির্যাতনের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমাদের অনেককে কী নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে, তাদের ছবি তো আমাদের সাংবাদিকরা ছাপে না। প্লিজ সাংবাদিক ভাইদের বলব, কালোকে কালো বলবেন, সাদাকে সাদা বলবেন এবং যার যা অবদান আছে, সেই অবদানকে স্বীকার করবেন। আমরা কেউই মুচলেকা দেইনি শত অত্যাচারের মুখেও।
সমন্বয়ক গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ :
ফখরুল বলেন, আজকে যখন পত্রিকায় দেখলাম, বেদনায় একেবারে নীল হয়ে গেছি। দেখলাম পাঁচজন সমন্বয়কারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা জোর করে একটি বাড়ি থেকে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে নিয়েছে। এই পরিণতি কি আমরা চেয়েছিলাম? এই বাংলাদেশের মানুষ কি কেউ এটা চেয়েছিল? এতো তাড়াতাড়ি যদি এই ঘটনা ঘটে, একবছরও হয়নি; তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? প্রিয় সহকর্মী যোদ্ধারা (যুবদলের নেতাকর্মী) এই কথাগুলো এজন্য বলছি, গোটা বাংলাদেশ তোমাদের দিকে চেয়ে আছে। দুঃখ হয়, আমাদের যখন আমরা দেখি যে– এক বছর সময়ের মধ্যেও আমরা একথা জোর গলায় বলতে পারছি না যে, আমরা তৈরি হয়ে গেছি, এদেশ আমরা নতুন করে গড়ে তুলব। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব সেই সুদূর থেকে দিন–রাত ২৪ ঘণ্টা তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, সংগঠিত করবার চেষ্টা করছেন, আমাদেরকে আন্দোলনে নামিয়ে ফ্যাসিস্টদের পতন করে। এখন তিনি চেষ্টা করছেন, কাজ করছেন যে– বাংলাদেশকে কী করে গড়ে তোলা যায়। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।