রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও গ্রামীণ বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে ৮টি ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, উপ–স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ৭টি। তবে এসব উপ–স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো দীর্ঘ বছর ধরে কোনটা অস্তিত্ব হারিয়েছে, কোনটা হয়েছে বেদখল। কোনটা আবার জরাজীর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। এসব নিয়ে উপজেলা মাসিক সভায় একাধিকবার কথা উঠলেও দীর্ঘ বছরেও তা সমাধানে এগিয়ে আসেনি কেউই। ফলে সংকটে পড়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা। জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার একমাত্র সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ভবন ও চিকিৎসক সংকটসহ নানা কারণে নিজেই রোগী। তবে এর চেয়েও খারাপ অবস্থা উপজেলার ৭টি উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর। ভবনগুলো জরাজীর্ণ, ব্যবহারের অনুপযোগী, আবার কোনোটি বিলুপ্ত হয়ে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নেই। সরকারি কিংবা বেসরকারি পরিত্যক্ত ঘরে কোনো কোনো ইউনিয়নে নামমাত্র সেবা কার্যক্রম থাকলেও দেখা মেলে না চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামীণ জনপদের বাসিন্দারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সরফভাটা, পোমরা, পদুয়া, শিলক, হোসনাবাদ, বেতাগী ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট এলাকায় কাগজে কলমে ৭টি উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। নিয়ম অনুসারে এসব কেন্দ্রে সপ্তাহের খোলার দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। নিয়ম অনুসারে একটি উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন উপ–সহকারী মেডিকেল অফিসার, ১ জন ফার্মাসিস্ট এবং একজন এমএলএসএস দায়িত্বে থাকার কথা। কিন্তু নানা দূরবস্থার কারণে তাদের কেউই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারেন না। এসব উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বশীল চিকিৎসকদের মূল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট থাকায় বেশিরভাগ সময়ে সেখানেই চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হয়। সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরফভাটা ইউনিয়ন উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অনেক আগেই কর্ণফুলী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষেত্রবাজারের কাছে ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে নামমাত্র চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বেতাগীর উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্থাপনা আছে। তবে বিদ্যুৎ থাকলেও নেই পানির কোন ব্যবস্থা। ভবনটিও জরাজীর্ণ। পদুয়া কেন্দ্রটি সেমিপাকা টিনসেডের এবং চার কক্ষবিশিষ্ট। পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে। কোন স্থাপনাই নেই হোসনাবাদ ও পোমরা ইউনিয়ন উপ–স্বাস্থ্য কেন্দ্রের। পোমরায় পুরাতন জরাজীর্ণ একটা স্থাপনায় চিকিৎসা দেয়া হয়। অন্যদিকে হোসনাবাদে ভবন নেই। এমনকি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য জায়গাও নেই। জায়গা যেটা ছিলো সেটা বেদখল হয়ে গেছে। তাই ফ্যামেলি প্ল্যানিং অফিসে বসে কার্যক্রম চালানো হয়। ধামাইরহাট উপ–স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কার্যক্রম পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে। তবে ভবনের জায়গাটি কেন্দ্রের নিজস্ব বলে জানা গেছে। এছাড়া শিলক উপ–স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ৭০ বছরের পুরাতন।
দীর্ঘ বছর ধরে এই চিকিৎসা কেন্দ্রটির তিনটি কক্ষের অবস্থা বেহাল এবং ব্যবহারের অনুপযোগী। স্থানীয়রা সমপ্রতি প্রবাসী, শিলক বাজার ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর অর্থায়নে কিছুটা সংস্কার করেছেন। জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাব জমিলা বলেন, উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বেহাল অবস্থার বিষয়ে উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। এছাড়া মাসিক সভায় এই নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে। তবে ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা এবং চিকিৎসক সংকটের মাঝেও বিকল্প ব্যবস্থায় সাব সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।












