এক কোটি সাত লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ফেঁসেছেন সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অফিস সহকারী মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজ। কার্যালয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা যোগসাজশে বিভিন্ন অপকর্ম করে মাহফুজুর রহমান স্ত্রীর নামেও গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
এই অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনসহ নানা অভিযোগে ইতোমধ্যে এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় কাগজে-কলমে পলাতক অভিযুক্ত এই কর্মচারী।
কিন্তু নিয়মিত তিনি অফিস করছেন সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। নিয়মিত দেখা মেলে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসেও। বুধবারও (২৫ সেপ্টেম্বর) তিনি অফিস করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী। মামলায় অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা উত্তর দেয়াং মোহাম্মদনগর গ্রামের এখলাসুর রহমানের ছেলে বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালে দুদকে জমা হওয়া এক অভিযোগ অনুসন্ধান করে মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এরপর কমিশনের নির্দেশে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন দিলুয়ারা মাহফুজ। খবর বাংলানিউজের।
পরে তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করে সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের সত্যতা পায় দুদক। দিলুয়ারা মাহফুজের এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনে তার স্বামী মাহফুজুর রহমান সহযোগিতা করেন। মাহফুজ দম্পতির এক কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৭৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তারা দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২১ টাকা মুল্যের সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করেছেন। মামলায় দুদক আইনের ২৬(২), ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার (খণ্ডকালীন) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, মাহফুজুর রহমান মামলার আসামি হয়েছেন সেটা আমি জানি না । পাশাপাশি দুদক থেকেও আমাদের জানানো হয়নি। মাহফুজ আমার অফিসে নিয়মিত অফিস করছেন। বুধবারও (আজ) তিনি অফিস করেছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী জানান, দুর্নীতি মামলায় পলাতক আসামিকে সরকারি দপ্তরে অফিস করতে দেওয়া বেআইনি। পাশাপাশি তিনি প্রশ্রয় পেয়ে এখন আরও বেশি দুর্নীতি করবেন। দুদকের উচিত ছিল তাকে কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার করার এবং তার সম্পদ ক্রোকের আবেদন করার। কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে মামলা রুজু হওয়া মানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত অথবা অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীর জামিন নেওয়া দরকার ছিল।
তিনি আরও বলেন, ওই কর্মচারী দুর্নীতি করে টাকা অর্জন করেছেন এবং এগুলো এখন নিরাপদে ভোগ করতেছেন। এই ভোগ করতে দেওয়াও একধরনের অপরাধ। দুদকের উচিত ছিল তাকে কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার করার এবং তার সম্পদ ক্রোকের আবেদন করার।
অভিযোগের বিষয়ে দুদকের মামলায় আসামি হওয়া সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অফিস সহকারী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল নম্বরে ও হোয়াটঅ্যাপে একাধিকার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর দুদকের উপ-পরিচালক আতিকুল আলম জানান, সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অফিস সহকারী মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী নিযোগ দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। মামলার তদন্তকালে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে।