হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আজ রোববার। হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (বড়) মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। হেফাজতের নতুন আমির কে হচ্ছেন? এ নিয়ে হাটহাজারীসহ সারা দেশে চলছে আলোচনা। এছাড়া সম্মেলনের পূর্বে বিলি করা একটি প্রচারপত্র নিয়ে সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে গুঞ্জন চলছে।
জানা যায়, ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ হয়। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর ঘটনার পর ব্যাপক আলোচনায় আসে সংগঠনটি। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির হিসেবে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর আমিরের পদটি শূন্য হয়। এরপর থেকে এ পদের জন্য হেফাজতের শীর্ষ কয়েকজন নেতার মধ্যে তোড়জোড় চলছে।
শীর্ষ এ পদে কে আসছেন? হাটহাজারী মাদ্রাসা হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে থাকলেও সংগঠনটির বেশিরভাগ অংশ চাচ্ছে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থানান্তর করতে। এজন্য ঢাকায় অবস্থানরত হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্য থেকে আমির ও মহাসচিব নির্বাচনের ব্যাপারেও অনেকে ভাবছেন। সম্মেলনে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আহমদ শফীর অনুসারী নেতাদের কৌশলে বাদ রেখে নতুন কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে সারা দেশ থেকে কওমি অঙ্গনের শীর্ষ আলেমগণ আজকের কাউন্সিলে যোগ দিতে আসছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। হেফাজতের প্রায় সাড়ে তিনশ কেন্দ্রীয় আলেমের মতামতের ভিত্তিতে নতুন আমির নির্বাচিত হবে।
জানা গেছে, নতুন আমির হিসেবে বর্তমান মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীকে অনেক আলেম সমর্থন করছেন। এছাড়া নগরীর লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক ও হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলামের নামও আলোচনায় রয়েছে।
মহাসচিব পদ নিয়েও চলছে নানামুখী আলোচনা। এ পদের জন্য একাধিক নাম শোনা গেলেও হেফাজতের শীর্ষ নেতা মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী কিংবা মাওলানা মামুনুল হককে এ পদে দেখতে চাইছেন বেশিরভাগ আলেম।
এদিকে, হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল সামনে রেখে সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে একটি প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর কয়েকজন তরুণ মোটরসাইকেলে করে এসে পৌরসভার নুর মসজিদের সামনে সড়কে প্রচারপত্রগুলো ফেলে যায়। মানবতা বিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাঈদীর পুত্র শামীম বিন সাঈদী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর ছবি প্রচারপত্রে ছিল। তবে বিলি করা প্রচারপত্রে কারো নাম ছিল না।
অভিযোগ আছে, কাউন্সিলে বর্তমান কমিটির অনেকে দাওয়াত পাননি। অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটির নেতা মাওলানা মীর ইদরিস বলেন, বর্তমান কমিটির সকল নেতাকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশের আলেম সমাজ। গুরুত্বপূর্ণ এ পদে যিনি আমির নির্বাচিত হবেন তাকে নিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে। তিনি বলেন, সম্মেলন ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ৬৪টি জেলা থেকে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমির নির্বাচিত হবে।
এদিকে হেফাজতের আমির আল্লামা শফির পুত্র মাওলানা আনাস মাদানি হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও কাউন্সিল নিয়ে তার তেমন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। শফীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি নীরব রয়েছেন। বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আল্লামা শফির অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মইনুদ্দিন রুহি বলেন, মুসলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার জন্য হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী হেফাজতে ইসলামকে একটি প্লাটফরম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই হেফাজতকে ক্ষমতালোভী একটি গোষ্ঠীর পকেট কমিটিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ কমিটিতে আল্লামা শফি, মুফতি আমিনী ও চরমোনাইয়ের পীরের অনুসারীদের বাদ দেওয়ার নীলনকশা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যারা হেফাজত আমিরের সাথে বেয়াদবি ও অমানবিক আচরণ করতে উৎসাহিত ছিলেন, এবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে তাদেরই মূল্যায়ন করা হচ্ছে।