কে বি হেলথ কেয়ারের কার্যক্রম বন্ধ করল স্বাস্থ্য বিভাগ

তিনশ টাকার ডেঙ্গু টেস্ট দেড় হাজার টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৬ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গু টেস্ট বাবদ সরকারি নির্ধারিত ফি তিনশ টাকার স্থলে দেড় হাজার টাকা আদায় করা বেসরকারি ল্যাব কে বি হেলথ কেয়ারের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ‘কালামিয়া বাজারের কে বি হেলথ কেয়ার/তিনশ টাকার ডেঙ্গু টেস্ট দেড় হাজার টাকা!’ শিরোনামে গতকাল (১৫ জুলাই) দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ফোন করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমরা ফোন করে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছি। রোববার (আজ) অফিস সময়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফোন করে প্রতিষ্ঠানটির (কে বি হেলথ কেয়ার) জিএম আব্দুল মন্নানকে কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয় বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। নির্দেশের পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে বলেও দাবি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের। বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবে ডেঙ্গু টেস্ট (এনএসওয়ান এবং আইসিটি ফর ডেঙ্গু) ফি প্রতিটি তিনশ টাকায় নির্ধারণ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত বছরের নভেম্বরে জারিকৃত সরকারি এই নির্দেশনা মেনে চলতে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর বার্তাও দেয়া হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই নির্দেশনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট ফি তিনশ টাকার স্থলে দেড় হাজার টাকা আদায় করে আসছিল নগরীর বাকলিয়া এলাকার কালামিয়া বাজার মোড়ের কে বি হেলথ কেয়ার নামে বেসরকারি ল্যাবটি। যা সরকার নির্ধারিত ফি’র তুলনায় ১২০০ টাকা বেশি। গত ১০ জুলাই বেসরকারি ল্যাবটিতে একজন রোগীর ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট করানোর রশিদে দেখা যায়ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট ফি হিসেবে দেড় হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া নিডল এবং রেড টিউবের ফি ধরা হয়েছে ৩০ টাকা। সব মিলিয়ে এই টেস্টের (ডেঙ্গু এনএসওয়ান) ফি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৩০ টাকা। যদিও ৫৩০ টাকা ডিসকাউন্ট দেখিয়ে রোগীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।

সত্যতা যাচাইয়ে রশিদে থাকা প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল নম্বরে আজাদীর পক্ষ থেকে ফোন করা হয়। রিসিপশনে দায়িত্বে থাকা এক কর্মী ফোন ধরেন। রোগী সেজে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট ফি কত নেয়া হয় জানতে চাওয়া হলে দেড় হাজার টাকা বলে জানান ওই কর্মী। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি ল্যাবে ডেঙ্গু টেস্ট ফি তিনশ টাকার বেশি নেয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

এদিকে, গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশের পর দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়। জিএম আবদুল মন্নানের স্বাক্ষরে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছেযে দিনের টেস্ট নিয়ে আজাদীতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে, সেটি সরকারি নির্দেশনার আগের। প্রতিবেদনটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এখানে উল্লেখ্য যে, গত ১০ জুলাই (৫ দিন আগে) টেস্ট করা এক রোগীর রশিদের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সাথে রশিদের ছবিও ছাপা হয়েছে। অথচ বেসরকারি ল্যাবে ডেঙ্গু টেস্ট ফি তিনশ টাকা নির্ধারণ করে দিয়ে গতবছরের (২০২২ সালের) নভেম্বরেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশনা জারি করে বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। প্রতিষ্ঠানটির দাবির প্রেক্ষিতে বলা যায় যে১০ জুলাইয়ের আগে থেকে দীর্ঘদিন ধরে ডেঙ্গু টেস্টের ফি বাবদ তারা দেড় হাজার টাকাই আদায় করে আসছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ চট্টগ্রামে শ্রমিক দলের মহাসমাবেশ
পরবর্তী নিবন্ধসেই সহকারী প্রক্টরের স্ত্রীর নিয়োগ বাতিল