চট্টগ্রাম–৮ আসনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সারোয়ার হোসেন বাবলা’র পরিচিতি ছিল ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে। পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে সিএমপি’তে। অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে অসংখ্যবার জেলও কেটেছে। সর্বশেষ গত বছরের ২৭ জুলাইও গ্রেপ্তার হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জামিনে আসে। স্থানীয়রা জানান, বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ এলাকায় নতুন বাড়ি নির্মাণ করার আগে তাকে দিতে হতো চাঁদা।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নগরের প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে ১১ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় আলোচনায় আসেন সরওয়ার। একই বছরের ৬ জুলাই বায়েজিদ এলাকা থেকে তাকে একে ৪৭ রাইফেল ও গুলিসহ আটক করে পুলিশ।
জানা গেছে, সরোয়ার বাবলা আলোচিত ‘শিবির ক্যাডার’ বলে পরিচিত ও বর্তমানে বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) এর কর্মী ছিল। ২০১৫ সালে বড় সাজ্জাদের বলয় থেকে বের হয়ে আলাদা বাহিনি গড়ে তুলে। এদিকে বড় সাজ্জাদের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রামে বিভিন্ন অপরাধে নেতৃত্ব দেয় ছোট সাজ্জাদ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়। ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয় বলে ধারণা পুলিশের। বর্তমানে জেলে আছে ছোট সাজ্জাদ।
এ বিষয়ে গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতাল সাংবাদিকদের সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, সারোয়ার বাবলার ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল। যারা করেছে এদেরও। এরা প্রতিপক্ষ ছিল। এই ঘটনার মূল কুশীলব কিন্তু বর্তমানে জেলে। দেশের বাইরে থেকেও নানা রকম ইন্ধন আসছে।
জানা গেছে, ২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটজন নিহত হন। সে ঘটনায় করা মামলায় বড় সাজ্জাদ সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। এরপর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামাননি। বিদেশ থেকে তার বাহিনির মাধ্যমে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে অপরাধ পরিচালনা করে আসছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন ছোট সাজ্জাদ।
পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে জামিনে বেরিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যাক্সন (পরে নিহত) ও সরওয়ার কাতারে আত্মগোপনে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফোনে চাঁদা দাবি করে সরওয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম। তাদের হয়ে চাঁদাবাজির কাজ করত অনুসারীরা। তাদের কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বায়েজিদের নয়াহাটে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। এরপর কাতারে বসে বাংলাদেশে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাতার থেকে বাংলাদেশে পৌঁছালে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই গ্রেপ্তার হন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিতে থাকেন। তবে নগর যুবদল এ বিষয়ে ওই সময় বিবৃতি দিয়ে জানায়, সরোয়ার যুবদলের কেউ না।
সরোয়ার দুই মাস আগে বিয়ে করেন। তার বিয়েতে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগেও টার্গেট ছিল সরোয়ার : গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরোয়ার। পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে সরোয়ারকে গুলি করা হয়।












