কে এই কিয়ার স্টারমার?

| শনিবার , ৬ জুলাই, ২০২৪ at ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। এই বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে ১৪ বছর পরে লেবার পার্টি আবারো ব্রিটেনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী হলেন স্যার কিয়ার স্টারমার।

চার বছর আগে কট্টর বামপন্থী রাজনীতিবিদ জেরেমি করবিনের জায়গায় লেবার পার্টির নেতৃত্বে আসেন স্যার কিয়ার স্টারমার। রাজনীতির ময়দানের একেবারে কেন্দ্রে তার দলকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এবং ভোটে ভালো ফল করার জন্য কাজ করছেন তিনি।

আইনজীবী হিসেবে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের পর স্টারমার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সাংসদ হন পঞ্চাশের কোঠায় এসে। তবে রাজনীতি নিয়ে তার বরাবরই আগ্রহ ছিল। যুবক অবস্থায় তিনি ছিলেন উগ্র বামপন্থী। ১৯৬২ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে একজন, কিয়ার স্টারমার বেড়ে ওঠেন দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডের সারেতে। তার বাবা একটা কারখানার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে কাজ করতেন এবং মা ছিলেন নার্স। তার পরিবারও কট্টর লেবার পার্টির সমর্থক ছিল, যার প্রতিফলন পাওয়া যায় তার নামে। স্কটিশ খনি শ্রমিক কিয়ার হার্ডির নাম অনুসারে তার নাম রাখা হয়েছিল। লেবার পার্টির প্রথম নেতা ছিলেন কিয়ার হার্ডি। ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির স্থানীয় যুব শাখায় যোগ দেন কিয়ার স্টারমার। কিছু সময়ের জন্য উগ্র বামপন্থী একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করেছিলেন। পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে শিক্ষা লাভ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। লিডস এবং অঙফোর্ডে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ব্যারিস্টার হিসাবে মানবাধিকার নিয়ে কাজও করেছেন। সেই সময় ক্যারিবিয়ান এবং আফ্রিকার দেশগুলিতে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্তির জন্য তিনি কাজ করেন। ২০০৮ সালে, স্টারমার পাবলিক প্রসিকিউশনের ডিরেক্টর এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি চাকরি করেন। ২০১৪ সালে তাকে নাইট উপাধি দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রথমবার সংসদে যান ২০১৫ সালে। লন্ডনের হবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসের সাংসদ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর লেবার পার্টির নেতা হওয়ার সুযোগ পান স্টারমার। লেবার পার্টির জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল এটা। ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে হেরেছিল ওই দল, যা জেরেমি করবিনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। জেরেমি করবিন লেবার পার্টিকে বামপন্থী এবং মধ্যপন্থীদের মধ্যে ভাগ করেছিলেন। কিন্তু স্টারমার বলেছিলেন তিনি পার্টিকে একত্রিত করতে চান। একই সঙ্গে করবিনের চিন্তাধারাও ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

প্রতিপক্ষের ‘উপহাসের নিশানায়’ প্রায়ই থাকেন তিনি। নিজেকে কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকা এক মানুষ হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন কিয়ার স্টারমার। এক সহকর্মী তার নাম দিয়েছিলেন ‘মিস্টার রুলস! একবারই আইনের ফাঁদে পড়েছিলেন। যুবক বয়সে ট্রেডিং পারমিট ছাড়াই আইসক্রিম বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। আইসক্রিম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বটে, তবে তার বিরুদ্ধে আর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সাক্ষাৎকারে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে বিশেষ কিছু না বললেও, নিজের ‘প্রতিযোগিতামূলক দিক’টার কথা স্বীকার করেছেন স্টারমার। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে তিনি বলেন, আমি হারতে ঘৃণা করি। কেউ কেউ বলে থাকেন (প্রতিযোগিতায়) অংশগ্রহণ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আবার ওই দলে নেই।

অবসর সময়ে ‘ফাইভসাইড’ ফুটবল খেলে ক্লান্তি দূর করে থাকেন স্যার কিয়ার স্টারমার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধঘুরেফিরে হাসি সেই চার কন্যার মুখে