চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কটি। গত দুইদিনে এই সড়কে দুর্ঘটনায় পাঁচজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন সড়কটির কোনো না কোনো স্পটে দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, অদক্ষ চালক, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানববাহন, ফুটপাত দখলসহ সড়কজুড়ে নানা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকালে কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত নামে একটি বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। চলন্ত অবস্থায় ফিটনেসবিহীন এই বাসটির চাকা খুলে যায়। তবে ভাগ্যক্রমে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গত ১৩ জুলাই সকালে সড়কটির ভোবানিমিল এলাকায় ট্রাক ও সিএনজি টেঙির মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে রাঙ্গুনিয়া নিশ্চিন্তাপুর সেগুনবাগিচা সড়কে কাঠ বোঝাই জিপ উল্টে সাজ্জাত হোসেন (১৬) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সড়কের বৈজ্জালী গেট এলাকায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা বালুবাহী ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হলে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ার ফাইটার পদে কর্মরত জয় চৌধুরী (২৯) ও রাঙ্গুনিয়ার পোমরা শান্তির হাট এলাকার দোলন তালুকদারের ছেলে অন্তু তালুকদার (২২) নামের দুজন নিহত হয়। একইদিন রাত ১২টার দিকে আসে আরেক মৃত্যুর সংবাদ। এর আগের দিন ১২ জুলাই রাত ১১টার দিকে বোনের বিয়ের বাজার করে ফেরার পথে দ্রুতগামী ট্রাকের সাথে সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. ফয়সাল (১৩) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৮ জুন রাতে কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার সেগুনবাগিচা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া হোসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান দানু মিয়ার পুত্র সেকান্দর হোসেন লিটু (৩৩) ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। এভাবে সড়কজুড়ে নিয়মিত দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।
এসএম পেয়ারুল ইসলাম নামে এক স্কুল শিক্ষক জানান, মোটরসাইকেল চালকরা বেশিরভাগ কিশোর–যুবক শ্রেণির। সড়ক আইন সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট ধারণা নেই। এছাড়া হেলমেট ব্যবহারসহ সড়ক আইন মানার ব্যাপারে তারা খুবই উদাসীন। দুই থেকে তিনজন মানুষ নিয়ে গাড়ি বেপোরোয়া গতিতে ড্রাইভিং করেন তারা। তাই মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বেশি হয় এই সড়কে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার এই প্রসঙ্গে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গাড়ির ফিটনেস, চালকদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা, নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী উঠানামা না করানো, ঝুকিপূর্ণ বাকে গতিরোধক দেয়া, রাতের সড়কে পর্যাপ্ত সড়ক বাতি ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সর্বোপরি সড়কে দায়িত্বশীল মানুষ দিয়ে সার্বক্ষণিক এসব তদারকি করালে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। তিনি বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় উপস্থাপন করবেন বলে জানান।