কেন এই পৈশাচিক আচরণ

গোপা রানী দে | শুক্রবার , ২৮ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে নারীর প্রতি সহিংসতা বিশেষ করে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা অন্যতম সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের প্রতিপাদ্য ছিল -‘নারী কন্যার সুরক্ষাকরি,সহিংসতা মুক্ত বিশ্ব গড়ি।’ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, কতটা সুরক্ষা দিতে পেরেছে নারীদের জানিনা তবে উদ্বেগজনকভাবে নারী ও শিশু নিপীড়নের হার বেড়েছে ইদানীং। তন্মধ্যে অর্ধেক নারীই ধর্ষণ ও নিপীড়নকে আত্মসম্মান রক্ষার্থে মেনে নেয়, কেউবা অর্থের অভাবে কিম্বা নিপীড়কের হুমকিতে আইনের দ্বারস্থ হয়না, কেউ বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যা করে আর কেউ আইনী সহায়তায় বিচার খুঁজে আশায় বুক বেঁধে। নিপীড়ক পালিয়ে বেড়ায় দাপটে। মানবাধিকার সংগঠন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী ২০২৫ এর জানুয়ারিতে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ জন। এই দুই মাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৩৫ জন এবং প্রতিবন্ধী রয়েছে ৫ জন। এমন গর্হিত কাজ যখন বেড়েছে তখন এক শ্রেণীর মানুষের ইচ্ছে হয়েছে ধর্ষণকে ‘নারী নির্যাতন’ আখ্যা দিয়ে বিষয়টি হালকা করার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিপীড়ক পুরুষদের দৃষ্টিতে নারীরা যেন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তাই তারা নারীর পোশাক, আচরণ, উচ্চস্বরে কথা বলা ও স্বাধীনভাবে চলাতে বাধা সৃষ্টি করে এবং কৌশলে নারীকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে সহিংসতা চালিয়ে যায়। পুরুষের এই রূঢ়তার সাথে তাল মিলিয়ে কিছু নারীও নিজেদের অসম্মান ও অশ্রদ্ধায় সম্মতি প্রদান করে। তিন থেকে আট বছরের ধর্ষিতা শিশুদের কোন পোশাকের কমতি ছিল? তিন বছরের শিশুকন্যা থেকে নব্বই বছরের বৃদ্ধা মহিলা পর্যন্ত এদেশে ধর্ষণের শিকার। নারীর প্রতি এই পৈশাচিক আচরণ কেন?

একটি নারী শিশু জীবনকে উপভোগ করার আগেই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। পরিবার ও সমাজ তাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। তার কথা বলা, চলাফেরা,আচরণ, পোশাক, স্বাধীনতা সবটাতেই রয়েছে জবাবদিহিতা। অসম পরিবেশে তার বেড়ে ওঠা। নারীও মানুষ। আমাদের বুঝতে হবে আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। জীবনকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য চরিত্র গঠনসহ সকল মানবিক গুণাবলির অধিকারী হওয়া আবশ্যক, যেগুলো চর্চার প্রাথমিক বিদ্যাপীঠ হলো নিজগৃহ। তাই একটা ছেলে শিশু পরিপক্ক পুরুষ হওয়ার আগেই তাকে নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি, সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে হবে। নারীর প্রতি পুরুষের হিংস্র আচরণ বুঝিয়ে দেয় একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও নারীরা অসহায়। চলার পথে, গাড়িতে, চাকুরী স্থলে নারীদের হেনস্থা, অসম্মান, কুরুচিপূর্ণ বাক্যবাণ, এসিড সন্ত্রাসসহ নানা নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হয়। এই অন্যায্য ও অসুস্থ আচরণ পীড়াদায়ক। প্রতিকার পেতে প্রয়োজন একটা জোরালো সামাজিক আন্দোলন। মানবতার অবক্ষয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাব মানুষকে পশুর সমতুল্য করেছে। তাইতো কিছু অমানুষের পাশবিক আচরণের কবলে পড়ে শিশু আছিয়া প্রাণ দিয়েছে। সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান জ্ঞাপন ও সহানুভূতি প্রদর্শনের চর্চা থাকা দরকার। পরিবারে নারী শিশুদের প্রতি নির্যাতন ও অবহেলা দেখে পুরুষ শিশুরা বেড়ে ওঠে, এটা বন্ধ করা উচিৎ। শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লিঙ্গ সমতা, নারী অধিকার ও নারীদের মর্যাদা দানে পুরুষদের করণীয় সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষামূলক অধ্যায় সংযুক্ত করা উচিৎ।

ভুক্তভোগী যেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তাৎক্ষণিক সহযোগিতা ও বিনা খরচে চিকিৎসার সুবিধা পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য রাষ্ট্রকর্তৃক ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের ব্যবস্থাও করা দরকার। ধর্ষণ আইনের সংশোধন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এছাড়া কঠোর আইন প্রয়োগ করে ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বোয়ালখালী হাজী নুরুল হক ডিগ্রী কলেজ, চট্টগ্রাম

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিচয়
পরবর্তী নিবন্ধঈদের খাবারে সচেতনতা জরুরি