বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। “কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে সরকার পতনের এক দফা দাবি”– সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সে ঘটনার জের ধরেই আগস্টের পাঁচ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলের পতন ঘটে এ–ঘটনার মধ্য দিয়ে।
বৈষম্য–বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে আরো বেগবান ও গতিময় করতে ভূমিকা রেখেছে নারী শিক্ষার্থীরা। বলাবাহুল্য আন্দোলনের গতিমুখ নির্ধারণ করেছেন তারা। বাংলাদেশের ইতিহাসে যতো আন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিলো সবচেয়ে বেশি। ফলে এ আন্দোলনে হামলা, নিপীড়ন ও আটকের শিকারও হয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব নারী শিক্ষার্থী অগ্রভাগে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের নারী উমামা ফাতেমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া স্বৈরাচার বিরোধী এই আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।
আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, ভূমিকা, পরবর্তীতে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি নারীদের প্রত্যাশা এসব বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। আগামীর ভাবনা ও নিজের স্বপ্নের কথাও জানিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় দেওয়া সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
উমামা ফাতেমা বলেন, আমি সুফিয়া কামাল হলে থাকতাম, শুরুতে সেখান থেকে তেমন কোনো মিছিল হচ্ছিলো না। আমরা কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে ৬ জুন থেকে মিছিল–সমাবেশ করছিলাম। এরপর আমরা পরিকল্পনা সাজাই কীভাবে মেয়েদের এই আন্দোলনে যুক্ত করা যায়। এই ভাবনা থেকে আমরা আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাই। জুনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম ছিলো। কিন্তু সময় যত গড়ায়, বিশেষ করে জুলাই মাসে যখন মূল আন্দোলন শুরু হয়, তখন ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রী হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে গ্রন্থাগারের সামনে এসে জড়ো হতেন এবং সেখান থেকে শাহবাগ মোড়ে যেতেন। পরবর্তী সময়ে পুরো আন্দোলনের গতিমুখ নির্ধারিত হয়েছে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কারণে। নারী শিক্ষার্থীরা যদি এত ব্যাপক হারে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা না রাখতেন, তাহলে আন্দোলনের ওপর অত্যাচারের মাত্রাটা অনেকখানি বেড়ে যেতো এবং আন্দোলন সফল না হওয়ারও আশঙ্কা ছিলো। আন্দোলনের সময় আমাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা হয়। তারপরও থেমে না গিয়ে আমরা আন্দোলন করে গেছি। পরে তো আপনারা দেখেছেন যে, এই আন্দোলন সরকার পতনের দিকে গেছে। এটা মূলত ব্যক্তি যোগদানের বিষয় না, যখন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে একসঙ্গে হয়েছি তখনই কিন্তু আমরা সফল হয়েছি।
আগস্টের ১ তারিখ ফেসবুক পোস্টে উমামা লিখেন, আজ জুলাই মাসের ৩২ তারিখ…আমার জীবনের দীর্ঘতম মাস…
কতকিছু ঘটে গেল! আমাদের সব ওলটপালট হয়ে গেল! মিছিলে মিছিলে আমার অর্ধেক মাস কেটে গেছে। বাকি অর্ধেক মাস মৃত্যুর মিছিল দেখে। অনেক কথা বলার আছে! কত কথা লিখেছি! শেষে স্ট্যাটাস থেকে মুছে ডক–এ জমা করেছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি আমি স্বপ্নে শুধু মৃত্যু দেখি। একদিন স্বপ্নে দেখেছি আমরা লাশ কাঁধে মিছিল করছি, স্বপ্নের ফ্রেমটা লাল, আরেকদিন স্বপ্নে দেখি পুলিশ এসে বাসার সবাইকে নিয়ে গেছে, আরেকদিন স্বপ্নে দেখি মিছিলে আমরা স্লোগান দিচ্ছি, পুলিশ আর লীগ গুলি ছুড়ছে, ইট–পাটকেল ছুড়ছে, আমরা সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিছি। এরকম অনেক দুঃস্বপ্নে আমার জুলাই মাস কেটে গেছে। সব ফ্রেম লাল…আজকে অনেকক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। চোখ বন্ধ করলে আবু সাঈদকে দেখলাম। কেমনে সে বুকখানা পেতে দাঁড়িয়ে গেল বুলেটের সামনে! এখনো টিকে আছি কিভাবে যেন! আমি জানি, বেশিরভাগ মানুষের সাথেই এমনটা হচ্ছে। মাঝেমাঝে মনে হয় জুলাই মাসটা একটা দুঃস্বপ্ন। ঘুম ভাঙলেই আগের জীবনে ফিরে যাব। কিন্তু ঘুম ভাঙলেই বুঝতে পারি যা ঘটেছে সব বাস্তবে ঘটেছে। এই লাশের বিচার লাগবে। অন্তত একটা ভালো ঘুম হওয়ার জন্য হলেও লাশের বিচার লাগবে। আমি টের পাচ্ছি, আমি দিন দিন ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসের ওসমানে পরিণত হচ্ছি। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে ওসমানের উপর হাড্ডি খিজির ভর করেছিল। আমি নিজের মধ্যে মাঝেমাঝে ওসমানকে টের পাই। তখন বুঝতে পারি আমরা যে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেটাকে গণঅভ্যুত্থান বলে। ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ এর ১৯৬৯ আর আজকের ২০২৪ এ কোনো তফাত নাই।
জুলাই থেকে আমাদের গণঅভ্যুত্থানের শুরু।
আমরা তো পড়াশোনা করা পরিবার। থানা, পুলিশ, রাজনীতি এসব তো আমাদের পরিবারে নেই। ছাত্রলীগের হামলার শিকার হই যেদিন, আমাকে ওই রাতে টেলিভিশনে দেখায়। তখন আমার বাবা–চাচা কেউ ঘুমাতে পারেননি। আমি হাঁটতে পারছিলাম না, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলাম, আমার বাবা তো ফোন দিয়ে রীতিমতো কান্নাকাটি করছিলেন। ওই রাতে আমরা একটা ভীতিকর পরিস্থিতিতে ছিলাম। আমরা হল ছেড়ে যেতে বাধ্য হই, সেই সময় প্রচুর মানসিক চাপে ছিলাম। সরকার যেসব গুজব ছড়াচ্ছিলো, আমরা চেষ্টা করছিলাম সেটিকে ভুয়া খবর প্রমাণিত করতে। এটাই আমাদের মূল কাজ ছিলো ওই সময়। আর বাকি যা করার তা করেছে সাধারণ ছাত্র ও জনগণ। একটি ঘটনা আমি বলতে পারি, সম্ভবত সেটি ২৬ জুলাই। আমরা, নাহিদ ভাইরা মিলে ‘চলো চলো ক্যাম্পাসে চলো’ এমন একটি আন্দোলন করার পরিকল্পনা করেছিলাম। সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিলো, কিন্তু শুনি বিকাল ৪টায় নাহিদ ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর শনিবার সারজিস ভাই, হাসনাত ভাইদের ধরে নিয়ে গেলো। ওইদিন আমার সঙ্গে নুসরাতের ভোর ৪টায়ও কথা হয়। এরপর ঘুমিয়ে যাই। কিন্তু এর দুই ঘণ্টা পরেই নাহিদা সরোয়ার নিভা আপু ফোনকল করে জানান, নুসরাতকে ধরে নিয়ে গেছে। এর পরের মানসিক অবস্থা আর না বলি। তবে এতোটুকু বলি–ওই সময় খুবই বাজে অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছি আমরা।
এখন আসি স্বপ্নের কথায়, এতো এতো স্বপ্ন আমাদের। তবে প্রথমে যেটা মনে করি, দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটেছে, এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক করা জরুরি। আমাদের যারা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আছে তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। বর্তমানে ছাত্ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে, পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে স্টাডি করছে, আমাদের সঙ্গেও পরামর্শ করছে। আমার মনে হয় ছাত্রদের নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা উচিত। যেখানে ছাত্র–পুলিশ–বিশেষজ্ঞ সবাই থাকবে। এর চেয়ে বড় বিষয় আমাদের এখানে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। আমাদের সংবিধানে মানুষের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটেনি, এখানে লাভ হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর। সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে, এটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করতে হবে। যার মাধ্যমে সংবিধানকে গণতন্ত্রমুখী গড়ে তোলা যাবে। এছাড়া দমন–পীড়নমূলক আইন, যেমন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, বিভিন্ন বাক স্বাধীনতা হরণ করার আইন, এই আইনগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে। এছাড়াও উপনিবেশিক আমলের আইন বাতিল করতে হবে। ইনস্টিটিউট সংস্কার করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন। এ বিষয়ে উমামা ফাতেমা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়াগুলো আমরা তাঁদের মাধ্যমে আদায় করে আনতে পারব বলে মনে করি। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। আমরা খুবই খুশি যে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুজন শিক্ষার্থী–প্রতিনিধি একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। নতুন সরকারের কাছে অবশ্যই আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা। এছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের সঠিক তালিকা করা। শহীদদের পরিবারকে বার্ষিক ভাতা দিতে হবে। অসংখ্য মানুষ আন্দোলনে আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আহত ব্যক্তিদের তালিকা করে চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসতে হবে। এগুলো আমাদের তাৎক্ষণিক দাবি। দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের পরিকল্পনা…। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারকে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
নারীদের জন্যে সরকারের কাছে উমামার প্রত্যাশা হলো, “সরকারের অবশ্যই উচিত নারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা, যাতে একজন নারী যেকোনো সময়ে কোনো ধরনের সহিংসতার ভয় ছাড়াই বাসা থেকে বের হতে পারেন। একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থাকতে হবে, যাতে যৌন নিপীড়নের যেকোনো ঘটনার বিচার করা যায়। অফিস–আদালতেও যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করা জরুরি। একজন নারী যাতে তাঁর সহকর্মী, শিক্ষক বা বন্ধু কারও নিপীড়নের শিকার না হন। সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতিটি অফিসে ডে–কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আহ্বান জানিয়েছে, সে ব্যাপারে উমামা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি জানাতেই পারে। সেই স্বাধীনতা তাদের আছে। তবে আমাদের ছাত্র জনতার বড় অংশ মনে করে, দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক কাঠামো রয়েছে, তা যেকোনো দলকেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার ক্ষমতা দেয়। এই রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার না করে কোনোভাবেই শুধু রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন করাটাকে আমরা সমর্থন করি না। বরং সময় নিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার, সংবিধান সংস্কার এবং আইনগুলোকে পরিশীলিত করা প্রয়োজন। দেশকে সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত হবে।
প্রধান সমন্বয়কদের একজন হিসেবে ভালো তো লাগছে। তবে এখন আমাদের কাঁধে প্রচুর দায়িত্ব। এখনো আমাদের কাছে নিহতদের তালিকা পরিষ্কার নয়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের শহীদদের তালিকা তৈরি করতে হবে। এরপর তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু তা–ই নয়, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এটা সরকারিভাবেই হতে হবে। দেশবাসীকে বলতে চাই, এটা কোনো একক ব্যক্তির আন্দোলন ছিল না, এটা আমাদের সবার প্রচেষ্টার ফসল। যখন এটা একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে যাবেন, তখন কিন্তু এই গণ–অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। প্রত্যেককেই মাথায় রাখতে হবে আন্দোলনটা আমার আন্দোলন ছিল, এই মন্ত্রিসভায় সবার ওপর আমার হক আছে। এটা যখন ভাবতে পারবো তখনই আমরা চাপ প্রয়োগ করতে পারব যেন আমাদের দাবিটা আদায় হয়। তখনই এই অর্ন্তবর্তী সরকারের মাধ্যমে দেশটাকে পুনর্গঠন করা সম্ভব হবে। আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই আমার স্বপ্ন। পরে ধীরে ধীরে আমি আরও সামনে এগোতে চাই।
উমামা তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন,
“বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” প্ল্যাটফর্মটার প্রয়োজন হাসিনার পদত্যাগের পর ফুরিয়ে এসেছে। দেশে এলাকা ভিত্তিতে ছাত্রদের “সহিংসতা প্রতিরোধ টিম”, “ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ টিম”, “ঘুষ/দুর্নীতি প্রতিরোধ টিম” তৈরি করে ছাত্রদের ভবিষ্যত বাংলাদেশ নির্মাণের কাজ করে যেতে হবে। আমাদের পড়াশোনায় ফিরে যাওয়া ও শিক্ষা–প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে নামিয়ে “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন”কে অতিদ্রুত অকার্যকর ঘোষণা করতে হবে। “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” একটি আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। আমাদের নেতৃত্বদের মধ্যে ৬ জুলাই এর দিকেই এই প্ল্যাটফর্মকেন্দ্রিক একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে যায়। সেটা ছিল, এই আন্দোলনের মঞ্চ থেকে পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংগঠন হবে না। এই আন্দোলনের মঞ্চকে রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিণত করলে আমাদের গণঅভ্যুত্থান তার আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হবে। অনেক সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভাবখানা এমন যেন তারা একটা কিছু! ছাত্র–জনতা একেকটা অবজেক্ট! নতুন স্বৈরাচার গজানোর আগেই ছাত্র–জনতার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নয়তো এই “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামক আমাদের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হবে এবং দ্রুত মানুষের আস্থা হারাবে।
“আমাদের বুঝতে হবে,
কোথায় আমাদের থামতে হবে।”