কেইপিজেড থেকে রপ্তানি আয় ৩০ হাজার কোটি টাকা

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | বৃহস্পতিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বিদেশী বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনায় এগুচ্ছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে প্রতিষ্ঠিত কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড)। যাত্রা শুরুর পর থেকে এই পর্যন্ত জুতা, পোশাক রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা রপ্তানির মাধ্যমে সংস্থাটি পৌঁছে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বিনিয়োগ সম্মেলন শেষে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বড় ধরনের বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাব মিলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিল্পায়নে অসামান্য এই অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে কেইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা কিহাক সাংকে সম্মানসূচক বাংলাদেশী নাগরিকত্ব (অনারারি সিটিজেনশিপ) প্রদানের মাধ্যমে সেই সম্ভাবনা আরো জোরালো হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী দুই বছরের মধ্যে কেইপিজেডের চলমান শিল্পকারখানা গুলো উৎপাদনে গেলে কর্মরত শ্রমিক সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

জানা যায়, কিহাক সাং এর হাত ধরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর ২ হাজার ৪৯২ একর জায়গাজুড়ে কেইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে প্রকল্পটি উদ্বোধন হলেও ২০১১ সালে কেইপিজেডে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন শুরু হয়। ৭৮ বছর বয়সী কিহাক সাং জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছে কেইপিজেডের এই স্বপ্ন ঘিরে। আশির দশকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প কোটামুক্ত সুবিধা পেত। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির সুবিধা নিতে ১৯৮০ সালের মে মাসে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন কিহাক সাং।

বাংলাদেশি কয়েকজন অংশীদার নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ইয়াংওয়ান বাংলাদেশ লিমিটেড নামের কারখানা। তার প্রতিষ্ঠিত ইয়ংওয়ান থেকে এক সময় কেইপিজেড নামে রপ্তানি প্রক্রিয়া জোনের যাত্রা শুরু হয়। কেইপিজেড সূত্র জানায়, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা সরেজমিন পরিদর্শন করে কেইপিজেড চেয়ারম্যান কিহাক সাং এর সাথে কথা বলেছেন। তুলনামূলক কম মজুরি, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ ও অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে কেইপিজেডে বিনিয়োগে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

জানা যায়, কেইপিজেডের নিজস্ব ৪৮ শিল্প কারখানার পাশাপাশি বর্তমানে আমেরিকা ও জার্মানির তিনটি কারখানা চালু রয়েছে। আমেরিকাভিত্তিক এমেরিকান এফার্ড সুতা উৎপাদন ও পেঙার বাংলাদেশ এঙেসরিজ উৎপাদনে জড়িত। জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনজেল বার্ডের বিনিয়োগ রয়েছে গার্মেন্টস খাতে। তিন প্রতিষ্ঠান মিলে ১৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আইটিখাতে বড় বিনিয়োগের আশা করছে কেইপিজেড। আগামী ২৫ এপ্রিল একটি প্রতিনিধি দল কেইপিজেডের আইটি প্রতিষ্ঠান টেকভিশন পরিদর্শনের কথা রয়েছে।

নিজস্ব বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে প্রতিবছরই এগিয়ে যাচ্ছে কেইপিজেড। ২০১২ সালে উৎপাদন শুরুর পর ১৩ বছরে রপ্তানি ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৭ বছরে রপ্তানি ছিল মাত্র ৫ লাখ ডলার। মূলত গত ৫ বছরে রপ্তানিতে কেইপিজেডে ঈর্ষনীয় সাফল্য এসেছে। চলতি অর্থ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২ হাজার ৪৯২ একর আয়তনের কেইপিজেড পুরোটাই পরিবেশবান্ধব শিল্প এলাকা। এখানকার প্রায় ৮২৩ একর জায়গা সবুজায়নের জন্য রাখা হয়েছে। ওপেন স্পেস রয়েছে পৌনে ৫শ একর জায়গা। এর মধ্যে ৪শ’ একর জুড়ে গড়ে উঠেছে ৪৮টি কারখানা। বিদেশী কিংবা ইয়ংওয়ানের নিজস্ব বিনিয়োগের জন্য আরো অন্তত ৪শ’ একর জায়গা রয়েছে।

কেইপিজেডের উপমহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ বান্ধব সবধরনের সুবিধা কেইপিজেডে রয়েছে। চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সাং পুরো এলাকাটিকে স্বপ্নে মত করে সাজিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরাও প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কেইপিজেডের বড় সুবিধা হলো ৪০ মেগাওয়াটের নিজস্ব সোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ১৬ মেগাওয়াট নিজেদের কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে, বাকী বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীদেও বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। বন্দর, শ্রমের মজুরি, যোগাযোগ অবকাঠামোসহ নানা সুবিধা রয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কেইপিজেড এই জোন থেকে দুই দশমিক পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। যা বিশাল এক অর্জন। নতুন বিনিয়োগকারীরা আসলে কেইপিজেড আরো এগিয়ে যাবে।

এদিকে কিহাক সাং সম্মান সূচক নাগরিকত্ব পাওয়ায় দারুন খুশি কেইপিজেডে কর্মরত ৩৫ হাজার কর্মী ছাড়াও সারাদেশে ইয়ং ওয়ানে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক। কর্মকর্তারা বলেন, কিহাক সাং

৭৮ বছর জীবনের মধ্যে ৪৫ বছরের একটি বড় অধ্যায় বাংলাদেশকে ভালবেসে পার করেছেন। আনোয়ারার মত এলাকায় কেইপিজেড প্রতিষ্ঠা করে ৩৫ হাজার লোকের কর্ম সংস্থান করেছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে কেইপিজেডে ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। কেইপিজেডে সু কারখানায় কর্মরত কাজী রাশেদ তার খুশির অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, কিহাক সাং বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় শক্তি। তাঁর নেতৃত্বে পর পর ৩ বছর রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে ইয়ংওয়ান ও কেইপিজেড। তাঁর হাত ধরে আরো এগিয়ে যাবে কেইপিজেড।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাড়তি শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্তে ট্রাম্পকে ড.ইউনূসের ধন্যবাদ
পরবর্তী নিবন্ধচীন বাদে সব দেশের ওপর নতুন শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প