কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় কোারিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ১০০ একর জমিতে হচ্ছে হাইটেক পার্ক। ‘গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, সুজ ফ্যাক্টরির পাশাপাশি এই জায়গায় আইটি এবং আইটি সেক্টরে বিনিয়োগ হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আইটি সেক্টর ও ইপিজেডে আরো ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তৈরি হবে ডিজিটাল উদ্যোক্তা।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক, কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে এ বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি, স্টার্টআপ ও ইনোভেশন ইকোসিস্টেম উন্নয়নের লক্ষ্যে এ ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
কেইপিজেড অফিস ভবনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথি ছিলেন। সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা জাবিন ও কোরিয়ান ইপিজেডের চেয়ারম্যান এবং সিইও কিহাক সং। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কেয়ান ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এন এম জিয়াউল আলম।
সমঝোতার আওতায় কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃক প্রায় ১০০ একর জায়গায় প্রস্তাবিত হাই-টেক পার্ককে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বেসরকারি হাই-টেক পার্ক হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়াও বিনিয়োগে নীতিগত সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি যৌথভাবে কাজ হবে। কোরিয়ান ইপিজেডে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জোন স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপনে সহায়তা করবে এবং একইসাথে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক বলেছেন, দেশে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি বাড়াতে ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরি করবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তরুণ প্রজন্ম চাকরি খোঁজার পরিবর্তে চাকরি সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে দেশের আইটি সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম চাকরি খোঁজার পরিবর্তে চাকরি সৃষ্টির প্রতি অধিক মনযোগী হোক। এছাড়া স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে উদ্যোক্তা এবং স্টার্ট-আপদের জন্য স্কেল-আপ প্রোগ্রাম, ট্রেনিং, কোচিং ও মেন্টরিং করা হবে।
পলক বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিঙ, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে চুয়েটে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী সমপ্রসারণের মাধ্যমে একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দর নগরী ও দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম আইটি বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, দেশে এই মুহুর্তে ৫ টি হাই-টেক পার্ক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। দেশের বিভিন্ন পার্কগুলোতে বেসরকারি খাত থেকে প্রায় ৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। পাশাপাশি ১৩ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও টিনা জাবিন সিপিএ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫০০ এর বেশি স্টার্টআপ কাজ করছে, যার মাধ্যমে ১৫ লাখেরও অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল স্টার্ট আপদের সহায়তায় সাড়ে সাত লাখের বেশি এসএমই তাদের ব্যবসা বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের জিডিপিতে স্টার্টআপদের অর্থনৈতিক অবদান দাঁড়াবে ২ শতাংশ।
কোরিয়ান ইপিজেড এর আইটি পার্ক জোন-কে বেসরকারি হাই-টেক পার্ক ঘোষণা দেওয়ায় বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে কোরিয়ান ইপিজেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এরফলে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগগুলোর যুগোপৎ প্রয়াশে দেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি আরো বিস্তৃত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।