কেইপিজেডে শিল্প সম্ভাবনা দেখলেন ৬০ বিদেশি বিনিয়োগকারী

কারখানার পরিবেশ দেখে মুগ্ধ

আনোয়ারা প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠিত কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখলেন বিদেশি ৬০ বিনিয়োগকারীরা। তারা শিল্পবান্ধব পরিবেশ, তুলনামূলক কম মজুরি, শিল্প এলাকার সবুজায়ন, অবকাঠামোগত সুবিধা দেখে মুগ্ধ হন। এসব বিবেচনা মাথায় রেখে কেইপিজেডে শিল্পায়নে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা।

গতকাল সোমবার সকালে বিমানে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে টানেল ঘুরে কেইপিজেডে আসেন ৬০ বিদেশি বিনিয়োগকারী। বিনিয়োগ ও শিল্প সম্ভাবনা যাচাইয়ে আসা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পদচারণায় মুখর ছিল কেইপিজেড এলাকা।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট২০২৫ শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। চারদিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিন গতকাল কেইপিজেড পরিদর্শন করেছেন চীন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিনিয়োগকারী।

সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেইপিজেড শিল্পজোনের টেক্সটাইল, কেপিপি, আর্ট গ্যালারি, টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল, আইটিসহ কেইপিজেডের বিভিন্ন শিল্পকারখানা পরিদর্শন করেন। এ সময় কেইপিজেডের চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সাং, বিডা ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সাথে ছিলেন। তারা বিনিয়োগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

বিডা জানায়, মূলত বাংলাদেশের শিল্পজোনসমূহের বাস্তব চিত্র, কারখানার পরিবেশ সরাসরি পরিদর্শনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করা এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) কর্পোরেশন (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিনোয়োগকারীরা কেইপিজেডে পরিদর্শন করেছেন। আমরা এসব বিনিয়োগকারীকে আমাদের প্রতিষ্ঠিত শিল্প কারখানার পরিবেশ, উৎপাদন ব্যবস্থাসহ পুরো শিল্পজোনের পরিবেশ দেখিয়েছি। আমাদের প্রতিটা শিল্প কারখানা শতভাগ পরিবেশবান্ধব। পুরো প্রকল্পের ৫২% সবুজ। তাই বিনিয়োগকারীরা আমাদের কারখানার পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। আশা করছি এই সম্মেলনের মাধ্যমে কেইপিজেডে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়।

পরিদর্শনে আসা নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগকারী রিক জানান, এখানকার অনুকূল পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করেছে। এ শিল্পজোনে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ অনেক সুন্দর। আমরা মনে করি শিল্প বিনিয়োগের জন্য এই শিল্পজোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখানে আমাদের বিনিয়োগের ইচ্ছে রয়েছে।

বেজার মীরসরাই অর্থনৈতিক জোনের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে বিডার উদ্যোগে কেইপিজেড শিল্পজোনের বিনিয়োগ পরিবেশ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী ও শিল্প উদ্যোক্তারা এসেছেন। তার কেইপিজেডের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তাদের সরাসরি পরিদর্শন শিল্পে আশার আলো জাগিয়েছে।

চীনের বিনিয়োগকারী কেবিন বলেন, আমি বাংলাদেশ তথা কোরিয়ান ইপিজেডে বিনিয়োগে আগ্রহী। কেননা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ অনেক ভালো।

কেইপিজেডের চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সাং বিনিয়োগকারীদের কোরিয়ান ইপিজেডে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কোরিয়ান ইপিজেডে ৪৮টির বেশি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক এখানে কাজ করছে। আমাদের সব কারখানা শতভাগ পরিবেশবান্ধব। পুরো শিল্পজোনের ৫২% সবুজ রেখে কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা তৈরি করি।

বিনিয়োগের বাধা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। তবে এই বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ লাভজনক বিনিয়োগের জন্য উত্তম গন্তব্য। তাই আমি এ দেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছি। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আইনি পদক্ষেপগুলো সহজ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কেইপিজেড পরিদর্শন শেষে বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা মীরসরাইয়ে অবস্থিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে কোরিয়ান এ শিল্পজোনে আরো লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্প, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানে এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। আনোয়ারায় বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হলে টানেলে গাড়ি চলাচলে প্রভাব পড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯শ কোটি টাকার তহবিল হবে
পরবর্তী নিবন্ধট্রাম্পকে ইউনূসের চিঠি, বাড়তি শুল্ক ৩ মাস স্থগিতের অনুরোধ