মীরসরাইয়ে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী কৃষক আবুল কাশেম (৬৪)। কেঁচো সার উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন মাশরুম, পানের বরজ, শাক–সবজির বাগান, নার্সারি, মাছ চাষ ও গরুর খামারসহ সমন্বিত কৃষি খামার। কেঁচো সার, মাশরুমসহ খামারে উৎপাদিত শাক সবজি, মাছ ও গরুর দুধ বিক্রি করে প্রবাস ফেরত আবুল কাশেম এখন মাসে আয় করেন ৪০ হাজার টাকা।
সমপ্রতি মীরসরাইয়ের হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে দোচালা টিনের ঘর। ঘরের নিচে সিমেন্টের তৈরি ২০টি রিং স্ল্যাব। এ সময় কথা হয় বৃদ্ধ আবুল কাশেমের সঙ্গে। এসব রিং স্ল্যাবে ২ বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন তিনি। রিং স্ল্যাবে গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ, হাঁস–মুরগির বিষ্ঠা ও কলাগাছ টুকরা টুকরা করে কেটে মিশ্রণ করা হয়। সব রিং স্ল্যাবে ছেড়ে দেওয়া হয় কেঁচো। তারপর চটের বস্তা দিয়ে রিং স্ল্যাব ঢেকে রাখা হয়।
জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে পাওয়া ১৬টি রিং ও নিজ খরচে ৪টি রিং এবং ৩ হাজার কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করেন। রিং ও ঘর নির্মাণসহ মোট খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা। এক মাসে উৎপাদন হয় ১০ মণ কেঁচো সার। প্রতি কেজি সার ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজি কেঁচো ১২শ’ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া মাশরুম, নার্সারির চারা, মাছ, গরুর দুধ বিক্রি ও অবসরে বাড়ির সামনে দোকানদারী করে উদ্যোক্তা আবুল কাশেমের এখন মাসে আয় ৪০ হাজার টাকা। আয়ের অর্থ দিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন, করেছেন পুকুরের গার্ডওয়াল নির্মাণ, পাকা দালানও।
এদিকে আবুল কাশেমের উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জামালপুর গ্রামের কৃষক পলাশ দত্ত জানান, আবুল কাশেমের কেঁচো সার ফসলে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছি। পাশাপাশি তার সমন্বিত কৃষি খামার আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
কৃষক আবুল কাশেম বলেন, যে হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে, তাতে ধানের চাষ করে লাভ হয় না। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। উৎপাদিত জৈব সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি। এছাড়া পিচ হিসেবে অথবা কেজি দরে কেঁচো কিনতে টেকনাফ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আসেন। পাশাপাশি মাশরুম উৎপাদন করে খরচের তুলনায় অর্ধেক লাভ করছি। সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করছি শুধুমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমে।
মীরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নে কর্মরত উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনিকা মজুমদার বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসল উৎপাদনে খুবই উপযোগী একটি সার। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা কৃষক পর্যায়ে এ সারের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় উৎকৃষ্টমানের ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রস্তুতে খামারিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে আসছি। স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম ইতোমধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট সার, মাশরুম উৎপাদন ও সমন্বিত কৃষি খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে যারা বেকার ও হতাশ যুবকদের জন্য প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্বাবলম্বী কৃষক আবুল কাশেম।