কেঁচো সারে বিষমুক্ত ফসল

লোহাগাড়ায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ভার্মি কম্পোস্টের ব্যবহার

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | রবিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাসায়নিকের বিকল্প কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট)। ব্যবহারে সফলতা, কম দাম, পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় এ সার ব্যবহারে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। গবাদিপশুর গোবরে কেঁচো ছেড়ে দিলে প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদন হয় এ সার। যা ভার্মি কম্পোস্ট সার নামে অধিক পরিচিত। পচনশীল দ্রব্য দিয়ে তৈরি ভার্মি সার ব্যবহারে জমির গুণগত মান ঠিক থাকে। এছাড়া হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, গবাদিপশুর গোবর, শাক-সবজির উচ্ছিষ্ট, খোসা ও কচুরিপানার মিশ্রণে কেঁচোর মাধ্যমেও এ সার উৎপাদন করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উর্বর মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা। এতে মাটিতে পানির ধারণক্ষমতা ও বায়ু চলাচলের সুযোগ বাড়ে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ মাত্র ১-২ শতাংশ। তাই মাটিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ালে মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা বাড়বে। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার মাটিকে নরম করে এবং পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন অণুজীবের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ক্রমেই ভূমির উর্বরতা কমে যেতে থাকে। ফলে এখন থেকেই মাটিতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার বাড়াতে হবে।
বর্তমানে উপজেলার আধুনগর, আমিরাবাদ, কলাউজান ও চুনতি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ জন কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করেন। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ দিয়ে থাকে। এ সার উৎপাদন করতে কেঁচো, গবাদিপশুর গোবর, স্যানিটারি রিং প্রয়োজন হয়। প্রতি রিং থেকে দেড়-দুই মাসে ২০০ কেজি করে সার উৎপাদন করা সম্ভব। উপজেলায় প্রতি দুই মাস অন্তর প্রায় ২০ মেট্রিক টন কেঁচো সার উৎপাদন হয়। প্রতিকেজি সার ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়।
পশ্চিম চুনতির কৃষক আলফা মণ্ডল জানান, এ সার খুব উপকারী। আমি নিজে সবজি ও ধান ক্ষেতে ব্যবহার করি। বাকি সার আশপাশে কৃষকের কাছে বিক্রি করি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছি। বর্তমানে আমার ৬টি রিং রয়েছে। প্রতি রিং থেকে এক ধাপে ৪৫-৫০ কেজি পর্যন্ত সার উৎপাদন করা যায়। প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এছাড়া সার উৎপাদনের পাশাপাশি কেঁচোরও বংশবিস্তার হচ্ছে। ফলে এ সার উৎপাদনে আগ্রহী কৃষকের মাঝে কেঁচো বিক্রি করা হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি ১২শ টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সরওয়ার আলম জানান, মূলত সবজি চাষে এ সার বেশি ব্যবহার করা হয়। প্রতি রিংয়ে ৫০ কেজি সার উৎপাদন করতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। এক রিংয়ের কেঁচো সার ৩০ শতক জমিতে ব্যবহার করা যায়। কেঁচো সার তৈরিতে তেমন খরচ না হওয়ায় কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
গত বুধবার বিকেলে চুনতি ইউনিয়নের দক্ষিণ হিন্দু পাড়ায় কৃষক আলফা মন্ডলের কেঁচো সার উৎপাদন পরিদর্শনে যান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। কেঁচো সার ব্যবহারে জমির জৈব উর্বরতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ভালো থাকবে মাটির স্বাস্থ্য। এটি সবজি ও ফল বাগানে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। এ সার ব্যবহারে শস্যের প্রাকৃতিক স্বাদ পাওয়া যায়। বৃদ্ধি পায় ফলনও। বিষমুক্ত ফসল ফলাতে জৈব সারের বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশখালী জেটিতে লাভ পয়েন্ট উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু