কৃষি খাতের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৫ মার্চ, ২০২২ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

সবুজের দেশ বাংলাদেশ ,কৃষির প্রতিফলন সবুজ। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশের মাটি উর্বর যার ফলে আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায় কৃষি। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশ জন্ম লগ্ন থেকে কৃষি ও কৃষক নামের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দেশের ৫০ বছর এবং পাকিস্তান সময় কালসহ ৭৩ বছর হয়ে গেল অথচ কৃষি নির্ভর দেশে কৃষির উন্নতির মুখ দেখেছে বলে মনে হয় না। কৃষি ও কৃষকের যে উন্নতি হয়নি তার প্রধান উদাহরণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান। কৃষি ও কৃষকের উন্নতি হয়নি বলেই তো আজ দেশের উন্নতি হয়নি। অর্থনৈতিকভাবে দেশ সমৃদ্ধ হতে হলে প্রথমেই কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষির ভুমিকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত করার জন্য কৃষিপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিকল্পে শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে। বিশ্ব বাজারে আমাদের বানিজ্যিক ভাবে শক্ত অবস্থানের জন্য কৃষি ও কৃষকের মান শীর্ষে রেখে আধুনিক চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। পুষ্টি সমস্যা সমাধানে কৃষির ভূমিকাকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। কৃষকের সুবিধা এবং অসুবিধা সমূহ দেখতে হবে গুরুত্বের সাথে। যখন দেশের কৃষক গৌরবময় জীবনযাপন করতে পারবে তখনই বাংলাদেশ গৌরবময় অর্থনৈতিক অবস্থানে যাবে তার আগে নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক সরকার কৃষিকে গুরুত্বের সাথে দেখে কিন্তু সরকারের পর্যাপ্ত লিডিং এর অভাবে কৃষির উন্নতি হয় না। আমাদের দেশের মাটি উর্বর, জাপানের মত কৃষি নির্ভর দেশ হওয়া সত্বেও আমরা তাদের মত কৃষি থেকে সুফল পাই নি। সরকার বাজেট ঘোষণাতে কৃষি খাত কে উচ্চতর দৃষ্টি থেকে দেখলেও বাজেটের যে অর্থ তা থেকে কৃষক কতটুকু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে তা অজানাই থেকে যায়। এমন কি অধিক কৃষক জানেন ও না বাজেট থেকে তাদের কি লাভ বা সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার কারণ একটাই অব্যবস্থাপনা ।আধুনিক কৃষিনীতির মাধমে কৃষির উন্নতি না করলে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। শিক্ষিত ব্যক্তিদের কৃষিখাতের উন্নতির জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও ওষুধ দ্বারা কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে হবে আর তার জন্য পদ্ধক্ষেপ নিতে হবে সরকারকেই। কৃষিখাতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি দেশের স্বার্থে, কৃষকের স্বার্থে।
বাংলাদেশ সরকারকে নিচের পদক্ষেপ গুলো নিতে পারলে আমাদের কৃষি প্রধান দেশ স্বপ্নের দেশে রূপান্তরিত হবে বলে বিশ্বাস করেন বিশেষজ্ঞরা। সেগুলো হলো : ১. কৃষিখাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিতে হবে, বিশেষ করে কৃষি উপকরণে। ২. শুষ্ক মৌসুমে সেচের সময় বিদ্যুৎ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. শুষ্ক মৌসুমে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের জন্য গভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. কৃষি জমি রক্ষার্থে, কৃষি জমিতে কোনো ধরনের শিল্প কারখানা যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে । ৫. বীজ ও সার বেজাল মুক্ত করতে হবে। ৬. পোল্ট্রি ফার্ম, মৎস ও মৌ চাষকে দ্বিধা না রেখে সরাসরি কৃষিখাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৭. কৃষি ঋণে অনিয়ম দূর করতে হবে। ৮. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অলস পড়ে থাকা টাকা কৃষি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে ৯ . প্রকৃত কৃষককে ঋণ দিতে হবে। ১০, কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থানীয় অফিসার বা কৃষি পর্যবেক্ষকরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিদর্শন করতে হবে বেশি করে। ১১ . বিভিন্ন সার ও ঔষধের গায়ে নিয়ম ইংলিশের পরিবর্তে বাংলায় লিখতে হবে। ১২. স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা করতে হবে। ১৩. সরকারসরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধানসহ সকল কৃষি পণ্য ক্রয় করতে হবে। ১৪ . অঞ্চল ভিত্তিক ক্রয়ের ধান রাখার জন্য গুদাম বানাতে হবে যাতে করে বেশি করে ধান সরকার ক্রয় করতে পারে। ১৫. কৃষি ভিত্তিক একটি সরকারী টেলিভিশন চালু করতে হবে। ১৬. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা করতে হবে। ১৭ .আধুনিক উপকরণ বিতরণ করতে হবে। ১৮. আধুনিক যন্ত্রপাতির উপর কৃষককে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ১৯. অনাবাদী জমিগুলোকে চাষের আওতায় আনতে হবে। ২০. এবং শিক্ষিত সমাজের বড় একটা অংশকে কৃষিখাত পরিচালনার জন্য গড়ে তুলতে হবে ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে