প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যশস্যের ফলন বাড়াতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষিবিদদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মেলাতে, আমরা ন্যানো–প্রযুক্তি, বায়ো–ইনফরমেটিঙ, মেশিন, ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের এই প্রযুক্তিগুলো কাজেও লাগাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে একথা বলেন। তিনি ব্রিতে বঙ্গবন্ধু–পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরতে বহুমুখী গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বে সহযোগিতার লক্ষ্যে কানাডার সাচকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির সাথে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর ব্রিতে এই কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, আমাদের নিজেদের খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতেও বাংলাদেশকে ঐতিহ্যগত শস্যের পাশাপাশি নতুন জাতের শস্য উৎপাদন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু খাদ্যশস্য উৎপাদনেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি, বরং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যও উৎপান করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেই দেশে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পায়। আওয়ামী লীগ সরকার এ অবস্থা মোকাবেলায় কৃষি গবেষণা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং কৃষকদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বীজ–সার বিতরণ করে এবং কৃষকদেরকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়। এই উদ্যোগের ফলে আমরা খারাপ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে সামনে এগিয়ে যাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় কৃষি উৎপাদন পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রি উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞানীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ব্রির বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা কৃষিতে পদক্ষেপ নিয়েছি। কৃষির যান্ত্রিকায়নের জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানের উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার বিশেষ করে গবেষণার জন্য বৃত্তি প্রদান করছে। তিনি বলেন, আমি সব সময় মনে করি গবেষণা ছাড়া ভাল কিছু করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ হিসাবে সরকার কৃষি গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি, সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণায়ও দৃষ্টি দিয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘ব্রির ৫০ বছরের গর্ব ও সাফল্য’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও তিনি ব্রি ও বিএআরসি এর পাঁচটি গবেষণা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
