কৃষকের ক্ষতি ১৮৬ কোটি টাকা

চট্টগ্রামে বন্যা

শুকলাল দাশ | মঙ্গলবার , ২২ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে সামপ্রতিক বন্যায় কৃষকের প্রায় ১৮৬ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে আউশ, আমন, সবজি এবং আমনের বীজতলা, পানের বরজ, পেঁপে এবং তরমুজ রয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে। বন্যায় নগরীর ৩ থানাসহ জেলার ১৮ উপজেলায় (১৫ উপজেলায়) ১লাখ ১৬ হাজার ২৩১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সপ্তাহব্যাপী একটানা ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের কারণে ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে শরৎকালীন ৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর সবজি সব গুলোই নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবদুস সোবহান আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টি, জোয়ারের পানি এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। বন্যায় আমন বীজকলা, আমন আবাদ, শরৎকালীন সবজি, আউশ আবাদ, পান বরজ, পেঁপে এবং তরমুজের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এবার চট্টগ্রামে ৩৩ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের বন্যায় ৬ হাজার ২৩ হেক্টর জমির ফল পানিতে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ১৬৭ হেক্টর জমির আউশ ফসল।

জেলায় ৬ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৫৪৯ হেক্টর জমির আমনের বীজ। চট্টগ্রাম কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে একটানা ভারি বর্ষণ ও বন্যায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সন্দ্বীপ এলাকায় আবাদ করা আউশ ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব ফসল কাটার কথা ছিল। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় ২০ হেক্টর জায়গায় আবাদ হওয়া আউশ ধানের মধ্যে ৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে মিরসরাই উপজেলায় ১শ হেক্টর, সীতাকুন্ডে ২৯৭ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৬৫ হেক্টর, হাটহাজারীতে ১৫ হেক্টর, রাংগুনিয়ায় ৪০ হেক্টর, পটিয়ায় ২৯০ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ২৩৫ হেক্টর, আনোয়ারায় ৬৬০ হেক্টর, চন্দনাইশে ২ হাজার ২শ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ১৭০ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ৪৯০ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১ হাজার ৫শ হেক্টর ও সন্‌দ্বীপে ৫শ হেক্টর জমির আউশ ফসল ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ৫০ হাজার ৭৬৩ হেক্টর আমনের মধ্যে পানিতে ডুবে গেছে ১৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমির ফসল। এরমধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৬৮ হেক্টর জমির ফসল, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১৩ হাজার ২৬২ হেক্টর জমির ফসল।

এদিকে উপজেলায় ৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজি একেবারে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির চিত্র: জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৫ উপজেলায় ৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমির শরৎকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে। যেমনবেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, শসা, ক্ষিরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুলসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। চন্দনাইশে ১ হাজার ২৪৫ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ২৫০ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ২২২ হেক্টর, বাঁশখালীতে ৩৫০ হেক্টর, মিরসরাইয়ে ১৫০ হেক্টর, সীতাকুন্ডে ৪১৫ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩১৫ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৩০ হেক্টর, রাউজানে ২৫৭ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৬৪৪ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৬৫ হেক্টর, পটিয়ায় ২৩২ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১৫৭ হেক্টর, আনোয়ারায় ১৪০ হেক্টর, ও সন্দ্বীপে ৪৫৫ হেক্টর জমিতে এবং নগরের পাঁচলাইশে ১০২ হেক্টর, ডবলমুরিংয়ে ৩৮ হেক্টর জমিতে লাগানো শরৎকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি থাকলে রাজনীতির মাঠ কলুষমুক্ত হবে না : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দর এলাকার সড়ক সংস্কারের নির্দেশ