কুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত, সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত

হামলার তদন্তে কমিটি

| বৃহস্পতিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দফায় দফায় হামলাসংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলম। তিনি বলেন, রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া মঙ্গলবার ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেমকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য বলেন, মঙ্গলবার ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে হলগুলো খোলা রাখা হয়েছে। তবে কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে হল ছেড়ে চলে যেতে দেখা গেছে।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তারপর থেকেই ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এর মধ্যে রাতে ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। এগুলো হলোবিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি; মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়া; ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা এবং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, সহউপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ।

বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের ফটকের চারপাশে অবস্থান নেয় আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীকেও। তবে কোনো ক্লাসপরীক্ষা হয়নি। দুপুরে প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিকসহ সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন : কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিবির নেতাকর্মীরা প্রথমে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে ছাত্রদল। বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি বলছে, হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহ্বায়ক ওমর ফারুক। বৈষম্যবিরোধীদের একটি মিছিল থেকে তার উসকানিতে ছাত্রদল সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ফারুকসহ হামলাকারীদের শিবির নেতা হিসেবে দাবি করেছে সংগঠনটি। যদিও হামলাসংঘর্ষের ঘটনার পরই প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপরই দায় চাপিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বুধবার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের যারা আত্মপ্রকাশ করতে ভয় পেয়েছে, সেই শিবিরের সন্ত্রাসীরা কাল (মঙ্গলবার) ছাত্রদলের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের নির্যাতনের মাত্রা এতই ছিল যে আহত শিক্ষার্থীরা দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানদারকেও বৈষম্যবিরোধী কথিত শিক্ষার্থী ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা হামলা করে। পরে গ্রামবাসীর সাথে অনাকাক্সিক্ষত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর ছাত্রদলের নামে এক ধরনের মব তৈরি করা হয়েছে। নাছির বলেন, প্রকাশ্যে সকলেরই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। খুলনায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে চায়।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবও কুয়েটের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিবির নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূষণকারী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার
পরবর্তী নিবন্ধআজ ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ