কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ

অনেক শিক্ষার্থী আহত, বিজিবি মোতায়েন

| বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে এ সংঘর্ষ শুরু হয় বলে খানজাহান আলী থানার ওসি মো. কবির হোসেন জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনী কাজ করছে। এদিকে বিকালে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে দু্‌ই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম। খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একযোগে কাজ করছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, সংখ্যা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। খবর বিডিনিউজের।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রচার কার্যক্রম চালায়। এর প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তারা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ বলে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টাধাওয়া শুরু হয়। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কিছু গোষ্ঠী তা চালু করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর হামলা হয়। তাদের মাইকও কেড়ে নেওয়া হয়। এ সময় রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে তা প্রজ্ঞাপন আকারে অধ্যাদেশে যুক্ত করতে হবে। যারা রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, সেই শিক্ষক ও কর্মকর্তাকর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।

এ বিষয়ে কুয়েট ছাত্রদলের কয়েকজন দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের অংশ এবং পতিত সরকারের ছাত্রসংগঠনের পক্ষের দুএকজন মিলে ক্যাম্পাস থেকে এবং ক্যাম্পাসের আশপাশে ছাত্রদলের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা নগর ও জেলা শাখা রাত ৮টায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়। অপরদিকে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা রাত ৮টায় একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযখনই তিস্তার পানির দাবি আসে তখনই আলোচনা পিছিয়ে দেওয়া হয় : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধএবার হোঁচট খেলে মানুষ আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না : মাহফুজ