কুয়াশা নাকি দূষণ, কিসে ঢাকছে শীতের দিন?

| বুধবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

শীতের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি সপ্তাহজুড়ে কমে গেছে দিনের দৃশ্যমানতা। সোমবার কিছু সময় সূর্যের দেখা মিললেও এর আগের পাঁচ দিন দেশজুড়ে তেমনটাও দেখা যায়নি। প্রকৃতিতে যে সাদা আস্তরণ সূর্যের আলো ঠেকিয়ে দিচ্ছে, তাকে কেবল শীতের স্বাভাবিক কুয়াশা হিসেবে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, কুয়াশার সঙ্গে দূষণ মিশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, যা সূর্যের আলোকে ঢেকে দিচ্ছে। আর কুয়াশার সঙ্গে দূষণের যোগ কেবল দিনের দৃশ্যমানতা কমিয়ে দিচ্ছে না, বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের অনুভূতি।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের পর্যবেক্ষণ, ১১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে যে ঘন কুয়াশার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, একই অবস্থা বিরাজ করছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে। ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। খবর বিডিনিউজের।

এর কারণ হিসেবে আবুল কালাম মল্লিক বলছেন, দিনের বেলা সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করতে পারছে না। ভূপৃষ্ঠের ঠান্ডা বাতাসের উপর দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হলে এ ধরনের ঘন কুয়াশা তৈরি হয়। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা এবং তার উপরে বাতাসও কিছুটা ঠান্ডা। এর উপর দিয়ে জলীয় বাষ্পসহ বাতাস প্রবাহিত হলে কুয়াশা হয়। রাতে ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা হয়ে যায়। তার উপরে দিনের আলো পড়ার পর কুয়াশা আরও বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিকে স্ট্র্যাটাস ক্লাউড বলা হয় বলে জানান তিনি।

আবুল কালাম মল্লিক বলেন, দিল্লি থেকে উত্তর ও মধ্য প্রদেশ হয়ে বাতাস বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিক হয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

এই বাতাস দূষিত পদার্থ নিয়ে এলে এবং দেশের অভ্যন্তরের দূষণের কারণে এই কুয়াশা তৈরি বৃদ্ধি পায়।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলছেন, শীতের স্বাভাবিক কুয়াশা থাকলে সেটি সূর্যের আলোতে সরে যেত এবং সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে আসত। কিন্তু এই কুয়াশাটা ধোঁয়া ও ধুলার সাথে মিশে গেছে। আমরা এটার নাম দিয়েছি ধোঁয়াশা। অর্থাৎ কুয়াশার সাথে দূষণ মিলিত হয়ে এই আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছে।

এর সঙ্গে শীতের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, নরমালি কুয়াশার ওজনের চেয়ে এই ধোঁয়াশা ভারী হয়ে যাচ্ছে। ভারী হয়ে এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে তিনচার কিলোমিটারের একটি আস্তরণ তৈরি করে। এবং এটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়ে যাচ্ছে। ফলে এটি ভেদ করে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারছে না। যতদিন যাচ্ছে, ততো আবহাওয়াটা দিনের বেলায় সন্ধ্যার মতো দেখাচ্ছে। মূলত এটি একটি দূষণের আস্তরণ।

প্রাকৃতিকভাবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় জানিয়ে দূষণ কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, আমরা দূষণটা কমিয়ে আনতে পারি, যেন নতুন করে দূষণ এখানে যোগ না হয়। বৃষ্টি ছাড়া এই দূষণ কমানো সম্ভব না।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, বৃহস্পতি বা শুক্রবার নাগাদ হালকা বৃষ্টি হবে। এরপর ২০ জানুয়ারি থেকে রাতের তাপমাত্রা আবার বাড়তে থাকবে। শীতে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়।

অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বৃষ্টির ফলে যখন এই লেয়ারটা (ধোঁয়াশা) সরে যাবে, তখন সূর্যের আলো সরাসরি আসবে এবং ভূপৃষ্ঠের সাথে বায়ুমণ্ডলের একটা যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বায়ুমণ্ডলের তিনটি স্তরে এখন ধোঁয়াশা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর। এমন আবহাওয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের বাসার বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী, শ্বাসকষ্টের রোগীদের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে, সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও এটি দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

কাজের জন্য যাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে, তারা শীত আর ঘন কুয়াশায় ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানাচ্ছেন। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ার কথা বলছেন চালকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাপমাত্রা কত নামলে স্কুল বন্ধ?
পরবর্তী নিবন্ধঅপরিবর্তিত থাকতে পারে রাত-দিনের তাপমাত্রা