কুইক রেন্টালে দায়মুক্তির বিধান অবৈধ : হাই কোর্ট

| শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (কুইক রেন্টাল) সংক্রান্ত আইনের দায়মুক্তির দুটি ধারা বাতিল ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক, সঙ্গে ছিলেন মো. তায়্যিবউলইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম।

এ আইনের ‘পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার’ সংক্রান্ত ৬() ধারা ও ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’ সংক্রান্ত ৯ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও মো. তায়্যিবউলইসলাম রিট আবেদনটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়। এ দুটি ধারা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল আদালত। খবর বিডিনিউজের।

রায়ে বলা হয়, আইনের ৬() ধারা সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ৯ ধারাটি সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাজেই ৯ ধারাটি বাতিলযোগ্য। সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আইনের ৬() ও ৯ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হলো।

সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের ২ ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্বে কোন চুক্তি বা দলিল প্রণয়ন বা সম্পাদন করা হইলে উক্ত কর্তৃত্বে অনুরূপ চুক্তি বা দলিল প্রণয়ন বা সম্পাদন করিবার জন্য রাষ্ট্রপতি কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হইবেন না, তবে এই অনুচ্ছেদ সরকারের বিরুদ্ধে যথাযথ কার্যধারা আনয়নে কোন ব্যক্তির অধিকার ক্ষুণ্ন করিবে না।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, যা আসে করদাতাদের পকেট থেকে। ফলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈধতা দিতে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’। শুরুতে দুই বছরের জন্য এ আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়।

রায়ে এও বলা হয়, আইনি জটিলতা এড়াতে ৬() ধারায় সংশ্লিষ্ট চুক্তির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে কনডন (মার্জনা) করা হলো। তবে চুক্তির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কার্যক্রম কিছু শর্তসাপেক্ষে পুনরায় দেখার অধিকার সরকারের থাকবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হলে সাময়িক এই কনডন প্রযোজ্য হবে না।

দেশে ১৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ৪০টি পিডিবি মালিকানাধীন। জাতীয় স্বার্থে, জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় চাকু-চাপাতি ও মাদক উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক নিহত