কী হচ্ছে নগর বিএনপিতে

এক মাসে তিন দফা গোপন প্রতিবেদন লন্ডনে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক বিষয়ে গত এক মাসে তিন দফা গোপন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন লন্ডনে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের একটাই প্রশ্ন, কী হচ্ছে নগর বিএনপিতে? জানা গেছে, নগর বিএনপি’র বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ সাড়ে ১৩ মাস পূর্ণ হচ্ছে আগামী সোমবার। দায়িত্বগ্রহণকালীন কমিটির নেতৃবৃন্দকে দ্রুততম সময়ে নগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে কেন্দ্রের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়। তবে পুনর্গঠন না হওয়ার জন্য একপক্ষ নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করকে দোষারোপ করে অভিযোগ করে দলের হাই-কমান্ডের কাছে।
আরেক পক্ষ অবশ্য নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানায়। এর প্রেক্ষিতে নগর বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থার প্রকৃত তথ্য জানার জন্য গোপন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন তারেক রহমান।
সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গোপন প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের মাধ্যমে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে টানা চারদিন চট্টগ্রাম অবস্থান করেন তিনি। এ সময়ে থানা ও ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রথম দফায় গোপন প্রতিবেদন জমা দেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ আজিজ, এসএম সাইফুল আলম ও নাজিমুর রহমান। ওইদিন তারা স্কাইপের মাধ্যমে তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মিটিংও করেন। এছাড়া জানুয়ারি মাসে নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করও একটি গোপন প্রতিবেদন জমা দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, গোপন প্রতিবেদন দেয়া এমএ আজিজ, এসএম সাইফুল আলম ও নাজিমুর রহমান ; তিনজনই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদের অনুসারী। এম এ আজিজ ও সাইফুল আলম বিভিন্ন সময়ে নগর কমিটি’র শীর্ষ পদে আসতে তদবিরও করেন। ফলে তাদের দেয়া প্রতিবেদনে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক-সচিবের বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে প্রশ্ন ওঠে। আবার ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের প্রতিবেদনে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে। তাই ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানের মাধ্যমে তৃতীয় প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়।
এ বিষয়ে আহমেদ আজম খান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সাংগঠনিক অবস্থা জানার জন্য চট্টগ্রাম যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নাই। এ কমিটিগুলো পুনর্গঠন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এগুলো নিয়ে দল কাজ করবে। চট্টগ্রামের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় কমিটি না থাকলে তো দল দুর্বল হয়ে যাবে। হয়তো সেজন্য কেন্দ্র বারবার নেতৃবৃন্দকে সেখানে পাঠাচ্ছে।
নগর বিএনপি’তে সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলে কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। সেগুলো আবার ঠিকও করা হবে। সেজন্যই আমাকে পাঠিয়েছে। আগে অন্য নেতৃবৃন্দ গেছেন। এগুলো সাংগঠনিক জায়গা থেকে স্বাভাবিক বিষয়।’
প্রতিবেদন দেয়া এসএম সাইফুল আলম বলেন, ‘সাংগঠনিক রির্পোট উপস্থাপন করেছি। ওইদিন ভার্চুয়ালি আমাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনাও হয়েছে। তবে কী রির্পোট দিয়েছি সেটা বাইরে বলার সুযোগ নাই।’ এম এ আজিজ বলেন, ‘কাউকে দোষারোপ করে কিছু উপস্থাপন করিনি আমরা। বরং বিগত সময়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কমিটি কী কী কাজ করেছে সেগুলো তুলে ধরেছি। এখানে লুকোচুরির কোনো সুযোগ নাই। কারণ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে সব তথ্য আগে থেকেই আছে।’
এ বিষয়ে আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ঘোষণা করতে কী কারণে বিলম্ব হয়েছে সেটা জানতে চেয়েছেন আমাদের কাছে। আমরা জানিয়েছি, দায়িত্ব পাওয়ার পর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছিল। এতে দুই মাস চলে গেছে। এরপর ডা. শাহাদত গ্রেপ্তার হয়ে দুই মাস জেলে ছিলেন। করোনার প্রকোপ বাড়লে চার মাস ১৮দিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। সর্বশেষে থানা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত করি। এখন ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠনের কথা এসেছে। সেটাও প্রায় প্রস্তুত। কেন্দ্র যেভাবে বলবে সেভাবে করব আমরা।’
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়। ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান নগরের আওতাধীন ১৫টি থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত দেন। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেন তিনি। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়কের সমন্বয়ে পৃথক ১৫টি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদনও জমা দেন তারা। তবে ২৯ মার্চ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হন আহ্বায়ক। ১ সেপ্টেম্বর জামিন পান তিনি। এরপর থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রতিটি থানায় ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক কর্মী সমাবেশ শুরুও হয়। হালিশহর এবং পাহাড়তলী ছাড়া বাকি ১৩ থানায় সমাবেশ শেষও করে। এ দুই থানায় কর্মী সমাবেশ শেষে একযোগে ১৫ থানায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল। এ অবস্থায় অক্টোবর মাসে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে, থানা কমিটির আগে ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনিট কমিটি গঠনের আগে সদস্য সংগ্রহেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে জন্য একটি তথ্য সংগ্রহ ফরমও পাঠায় কেন্দ্র। এর প্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে থানা কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে নগর বিএনপি। প্রায় সবগুলো ওয়ার্ড প্রস্তুতও হয়। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিদেশে অবস্থান করায় তার নির্বাচনী এলাকাভুক্ত ওয়ার্ডগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি নগর নেতৃবৃন্দ। ফলে ঘোষণা করা হয়নি ওয়ার্ড কমিটি। পরবর্তীতে আমীর খসরু দেশে ফিরে এলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ ও মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন আটকে যায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়ার সুস্থতায় বিএনপি নেতারা হতাশ : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধযদি বর্ষে মাঘের শেষ