ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন ৫৩ জন ক্রু নিয়ে গত বুধবার সাগরে নিখোঁজ হয়। এরপর সাবমেরিনটির সন্ধান ও উদ্ধারের প্রয়াসে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে মার্কিন সামরিক বাহিনী। তবে গতকাল সন্ধ্যায় ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল নৌবাহিনীর ওই সাবমেরিনটিতে যেটুকু অক্সিজেন আছে তাতে ক্রুদের শুক্রবার দিনগত রাত (আজ শনিবার ভোররাত) ৩টা পর্যন্ত বেঁচে থাকার কথা। কিন্তু সে সময়টাও এখন কেটে গেছে। সর্বশেষ তাদের অবস্থা এখন কেমন সে সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি।
ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আশমাদ রিয়াদ গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছিলেন, ক্রুদের উদ্ধারের জন্য আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় আছে। আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা করছি। কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২ নামের এই সাবমেরিনটি বালি দ্বীপের উপকুলের নিকটবর্তী সমুদ্রে একটি মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। বুধবার সকালে টর্পেডো মহড়ার অনুমতি চাওয়ার কিছু ক্ষণ পরই হঠাৎ করে সাবমেরিনটি নিখোঁজ হয়ে যায়। এর পর সাগরে ব্যাপক অনুসন্ধান তৎপরতা শুরু হয়। কমপক্ষে ৬টি যুদ্ধ জাহাজ, একটি হেলিকপ্টার ও ৪০০ লোক এ অনুসন্ধানে অংশ নিচ্ছে। বালি দ্বীপের কাছে যেখানে সাবমেরিনটি নিখোঁজ হয়েছে সেখানে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া জাহাজ পাঠিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানিও সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৯৭০ সালে নির্মিত সাবমেরিনটি জার্মানির তৈরি, এবং ইন্দোনেশিয়ার মোট পাঁচটি সাবমেরিন রয়েছে। যে জায়গাটিতে সাবমেরিনটি ডুবে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে তার কাছাকাছি সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, সাবমেরিনটির তেলের ট্যাংকে ছিদ্র হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার রাতে ইন্দোনেশিয়ান সামরিক বাহিনী জানায়, তারা সাগরের একটি জায়গায় ৫০ থেকে ১০০ মিটার গভীরে (১৬৫ থেকে ৩৩০ ফিট) কিছু একটা বস্তুর উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পেরেছে। সেটি নিখোঁজ সাবমেরিনটিই কিনা- তা জানার জন্য এখন শব্দতরঙ্গ দিয়ে নিমজ্জিত বস্তু চিহ্নিত করতে পারে এমন একটি জাহাজকে কাজে লাগানো হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর সূত্র বলেছে, সেদেশে সাবমেরিন হারানোর ঘটনা এই প্রথম। তবে এ ধরনের ঘটনা নিকট অতীতে বেশি কয়েকটি ঘটেছে।
রাশিয়ার নৌবাহিনীর কুর্স্ক নামে একটি সাবমেরিন ২০০০ সালে ব্যারেন্টস সি-তে ডুবে যায়, যাতে ১১ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। এক তদন্তে পরে জানা যায় যে, সাবমেরিনটির একটি টর্পেডো ফেটে গিয়েছিল এবং তা অন্য টর্পেডোগুলোতেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। বেশির ভাগ ক্রু-ই সাথে সাথেই মারা গিয়েছিল তবে কয়েকজন সাবমেরিনের মধ্যে আরো কয়েকদিন বেঁচে ছিলেন- তবে পরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়।
দু’হাজার তিন সালে চীনের নৌবাহিনীর এক মহড়ার সময় একটি সাবমেরিন দুর্ঘটনায় পতিত হয়, এবং ৭০ জন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও ক্রু নিহত হন। এছাড়া ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার একটি সামরিক সাবমেরিন ৪৪ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয়। এক বছর পর এর ধ্বংসস্তুপ খুঁজে পাওয়া যায়।