কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া হয়েছে

বিবিসি বাংলা | বৃহস্পতিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এডিস মশাবাহিত এই দুই রোগেরই উপসর্গ প্রায় একই রকম। এ কারণে অনেক রোগীরই প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গুর টেস্ট করানো হয়, কিন্তু এর ফল নেগেটিভ আসে। পরে আবারও টেস্ট করিয়ে চিকুনগুনিয়া রোগ শনাক্ত হয়েছে এমন কথা জানিয়েছেন অনেকেই।

একই মশাবাহিত এই দুই রোগের উপসর্গ এক হলেও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, প্রায় সব রোগীকেই তীব্র ব্যথায় ভুগতে হয় চিকুনগুনিয়া রোগে। ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া রোগের উপসর্গ কাছাকাছি হলেও এরকম আরও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যার আরেকটি পার্থক্য হচ্ছে শরীরে র‌্যাশ অথবা গুটি হওয়া। ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে এটি বহুলভাবে দেখা গেলেও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে র‌্যাশ হতে তেমন দেখা যায় না। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দুটিই ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। একই সময়ে এই দুটি রোগের প্রকোপ বাড়ার এটিও একটি কারণ।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, গত কয়েক বছর আগে যেমনটা ছিল, তার সাথে বর্তমানে ডেঙ্গুর উপসর্গের প্যাটার্ন বেশ খানিকটা পাল্টে গেছে। ডেঙ্গু জ্বরে এখন তীব্র তাপমাত্রা থাকে। চারপাঁচদিন পরে শরীরে লাল লাল র‌্যাশ হয়। র‌্যাশটা বেশি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অনেক সময় শক সিনড্রোমে চলে যায়। রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়। ফলে রক্তক্ষরণ হয়। একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে ব্যথাও থাকে, তবে ততটা তীব্র নয়। অনেক সময় ‘এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু’ যেমন এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, হার্ট, কিডনিসহ শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে সেই অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা খেতে পারেন না, বমি করেন।

চিকুনগুনিয়াতে ডেঙ্গুর মতো সব উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয় না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীর প্রথমেই জ্বর হয়। কিন্তু দুইতিন দিন পরে জ্বরের তীব্রতা খুব একটা বেশি থাকে না। পরে থেমে থেমে আবার রোগী জ্বরে আক্রান্ত হন। সেটা কখনো কখনো ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রিও হয়। শরীরে প্রতি জয়েন্টে জয়েন্টে তীব্র ব্যথা থাকে। প্রায় সব মাসলেও এই ব্যথা থাকে। তীব্র ব্যথায় রোগী হাঁটাচলা করতে পারে না, বসলে উঠতে পারে না এমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়। চিকুনগুনিয়া রোগের অন্যতম উপসর্গ জ্বরের পরে রোগীর পুরো শরীরের গিরায় গিরায় ব্যথা হয়। হাতপা ফুলে যায়। শরীরে র‌্যাশ তেমন একটা হয় না বললেই চলে। তীব্র মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হয়। এই রোগে রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা রক্তক্ষরণ হয় না। রোগী শক সিনড্রোমে চলে যাওয়া অথবা এই রোগে মৃত্যুঝুঁকি একদমই নেই। অনেক সময় চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর স্কিন বা চামড়ায়ও প্রভাব পড়ে। অনেকের গায়ের রং কালো হয়ে যায়, চামড়া উঠে। ডেঙ্গুতে র‌্যাশ হলেও শরীরের চামড়া কালো হয়ে যায় না। এই রোগে মৃত্যুঝুঁকি না থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে ভুগতে হয় আক্রান্ত রোগীকে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, হার্ট বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। খাবারে অনীহা এই রোগের রোগীদেরও রয়েছে।

উপসর্গ থেকে ধারণা পাওয়া গেলেও দুটি রোগের ক্ষেত্রেই ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করার মাধ্যমেই চিকিৎসক নিশ্চিত হতে পারেন যে রোগী ঠিক কী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে টেস্ট করালে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়। তবে এর বেশি সময় পার হলে তা আর শনাক্ত হয় না। কিন্তু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহ পরে চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করতে হয়। তবে এই সময়ের আগে টেস্ট করলে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দুই রোগের রোগীদেরই প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার ও ফল খেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, শরবত, জুস, গ্লুকোজ, স্যুপ, দুধ খেতে হয়। অনেক সময় বমির কারণে খাবার খেতে না পারলে তখন স্যালাইনও দেয়া হয়। তবে চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীকে তরল খাবারের পাশাপাশি বিশেষ করে ফল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিরোধ বাবার সঙ্গে, আছাড় মেরে ৬ বছরের ছেলেকে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধজন্মনিবন্ধন সনদ নিতে লাগবে না হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ