কীভাবে এত সুযোগ-সুবিধা পেলেন রোহিঙ্গা তাহের

রয়েছে এনআইডি, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ,ও ট্রেড লাইসেন্স, অবশেষে চকরিয়ায় গ্রেপ্তার

চকরিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে উখিয়ার থাইংখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সপরিবারে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গা নাগরিক মো. তাহের। আশ্রিত হিসেবে উপকারভোগী রোহিঙ্গা পরিবার হিসেবে তাহের, তার স্ত্রী সৈয়দুন নেছা ও দুই শিশুপুত্র ইউএনএইচসিআরের তালিকাভুক্ত হয়ে রেশন পাচ্ছেন। এছাড়াও তাহের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে নিজের নামে এনআইডি, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স বানিয়েছেন। কীভাবে এতো সুযোগসুবিধা পেলেন তাহের সেটিই এখন চিন্তার বিষয়। টাকার বিনিময়ে সে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (নম্বর৭৩৭৩০০৫৪৩৩) হাতিয়ে নেয়। শুধু তাহের নন, স্ত্রীর নাম ‘সৈয়দুন নেছা’ হলেও পরিবর্তন করে তৎস্থলে জালিয়াতির মাধ্যমে ‘শাবেকুর নিচা’ বসিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদও তৈরি করে।

আর সে সব সনদ যাচাই না করেই চকরিয়া পৌরসভা থেকে গত ১৮ জানুয়ারি রোহিঙ্গা তাহেরের নামে ইস্যু করা হয়েছে ‘নাগরিকত্ব সনদ’। যার নম্বর১১৬২৮। এমনকি সেই নাগরিকত্ব সনদ নেওয়ার পূর্বে ২০২৩ সালের ২ জুলাই পৌর বাস টার্মিনাল এলাকার ঠিকানায় ‘সততা মোটরস্‌’ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৩০০০ টাকা দিয়ে পেয়ে যায় ‘ট্রেড লাইসেন্স’। যার নম্বর২৯৭৭ এবং এসেসমেন্ট নম্বর৯৬১। এই ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

চকরিয়া থানা পুলিশ জানায়রোহিঙ্গা নাগরিক তাহেরকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আনা চোরাচালানির গরু ও ইয়াবা বিক্রির টাকা পৌরসভার ভরামুহুরীস্থ জনৈক রাসেলের বিল্ডিংয়ের ভাড়া বাসায় সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে ভাগাভাগির সময় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে অন্যরা পালিয়ে যায়। এ সময় তাহেরের হেফাজত থেকে রোহিঙ্গা এবং কথিত বাংলাদেশি নাগরিকত্বের বেশকিছু কাগজপত্র জব্দ করে পুলিশ। পুলিশ আরও জানায়রোহিঙ্গা নাগরিক রেজাউল করিম ও মাসুমা বেগমের ছেলে তাহের নিজের নামে বাংলাদেশি পাসপোর্টও বানিয়ে ফেলেছে। দালালের মাধ্যমে বরিশালের বানারী পাড়ার ঠিকানা দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে। এর পর সেই এনআইডি দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে নেয়। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রূপসার সাত নম্বর ওয়ার্ডের গাবেরগাঁও’র ঠিকানা দেখিয়ে তৈরি করা সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করেছে। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায় সে।

চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে জানানগ্রেপ্তার রোহিঙ্গা তাহেরের বিরুদ্ধে এনআইডি জালিয়াতি এবং বিদেশি নাগরিক আইনের ১৪ ধারা মোতাবেক মামলা রুজু করা হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোহিঙ্গা তাহেরকে গতকাল সোমবার বিকেলে চকরিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা নাগরিক কীভাবে ক্যাম্প থেকে বের হলো এবং কারা তাকে বের করে আনাসহ বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়ায় সহায়তা দিয়েছে তাদের ব্যাপারেও ব্যাপক অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। তাই রোহিঙ্গা নাগরিক তাহেরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমাণ্ডের আবেদনও করতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চকরিয়া পৌরসভা থেকে রোহিঙ্গা নাগরিক তাহেরের কথিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘সততা মোটরস্‌’ এর নামে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ এবং তার নামে ‘নাগরিকত্ব সনদ’ ইস্যু করার বিষয়ে কথা হয় চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী এনআইডি, হোল্ডিং নম্বরসহ সমুদয় কাগজপত্রসহ আবেদনের পর এসব সনদ ইস্যু করা হয়। তবে সে যদি প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গা নাগরিক হয় এবং যারা তাকে প্রত্যয়ন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ইস্যুকৃত সনদ বাতিল করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবইমেলা নিয়ে কী প্রত্যাশা
পরবর্তী নিবন্ধইশতেহারকে ভিত্তি ধরে ৫ বছরের পরিকল্পনা সাজানোর নির্দেশ