ইউক্রেনের ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে হামলা ও কয়েকটি শহরে দখল কায়েমের চেষ্টার মধ্যেই দেশটির রাজধানী ও প্রধান শহর কিয়েভ দখলের লক্ষ্যে পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে রুশ বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্যাটেলাইট কোম্পানি ম্যাক্সারের প্রকাশ করা ছবির বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সেনাদের হাতে রাশিয়ার একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
বেসরকারি মার্কিন উপগ্রহ কোম্পানি মাক্সারের সাম্প্রতিক ছবি বলছে, রুশ সাঁজোয়া যানের ইউনিটগুলো এখন কিয়েভের উত্তরপশ্চিমের হস্তমেলে অবস্থিত আন্তোনভ বিমানবন্দরের কাছের এলাকাগুলোতে ঢুকে পড়েছে ও চলাচল করছে। যুদ্ধের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় রাশিয়া ছত্রীসেনা নামানোর পর থেকে ওই এলাকাগুলোতে তুমুল লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এর ঠিক উত্তরে লুবিয়াঙ্কার কাছে ছোট ছোট এলাকায়ও বেশ কিছু সামরিক উপকরণ মোতায়েন রয়েছে, ছোট বড় কামানগুলোকে প্রস্তুত অবস্থায় অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, জানিয়েছে মাঙার। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া সম্ভবত আগামী দিনে নতুন করে আক্রমণ চালাতে তার বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করছে। এসব আক্রমণের মধ্যে রাজধানী কিয়েভে অভিযানও আছে। তাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, রসদ ঘাটতি সংক্রান্ত সমস্যা ও ইউক্রেনীয়দের তীব্র প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ার স্থলবাহিনীর অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ধারণার তুলনায় সামান্যই। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফও বলছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর রাশিয়ার বাহিনী ফের সংগঠিত হচ্ছে।
ঊর্ধ্বতন রুশ সেনা কর্মকর্তা নিহত : বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সেনাদের হাতে রাশিয়ার একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। মেজর জেনারেল আন্দ্রেই কোলেসনিকভ ছিলেন রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক বিভাগের ২৯তম বাহিনীর কমান্ডার। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এ খবর দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। কীভাবে তার মৃত্যু হল সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
ইউক্রেনে লড়তে বিদেশি স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছেন পুতিন : রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে পুতিন বলেন, রাশিয়া-সমর্থিত বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে যারা ইচ্ছুক তাদেরকে আসতে দেওয়া উচিত। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগু বলেছেন, রাশিয়া সমর্থিত বাহিনীর পাশাপাশি লড়তে মধ্যপ্রাচ্যে ১৬,০০০ স্বেচ্ছাসেবী আছে। এই স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে দক্ষ সিরীয় যোদ্ধারা থাকতে পারে, বলছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। সিরিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রধান সমর্থক।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পুতিন বলেছেন, আপনি যদি দেখেন এমন মানুষ আছে যারা অর্থের জন্য নয়, বরং দনবাসে মানুষকে সাহায্য করার জন্য নিজের ইচ্ছায় লড়তে আসতে চায়, তাহলে তারা যা চায় তা করতে দেওয়া এবং তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে সাহায্য করা প্রয়োজন।
বিজয়ের পথে ইউক্রেন : জেলেনস্কি
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেন বিজয়ের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, গতকাল শুক্রবার টিভি সম্প্রচারে দেওয়া ভাষণে তিনি এমন দাবি করেন। তবে কতদিন পর্যন্ত এ লড়াই চলবে সে বিষয়ে বলা সম্ভব নয় বলে সতর্ক করেন। খবর বিডিনিউজের।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কৌশলগত একটি মোড়ে পৌঁছার কথা জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে মুক্ত করতে আমাদের এখনও কত সময় লাগতে পারে সেটা বলা অসম্ভব। কিন্তু আমরা বলতে পারি এটা আমরা করবই। ইতোমধ্যে আমরা একটি কৌশলগত মোড়ে উপনীত হয়েছি। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার ওপর অবরোধের চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগু বলেছেন, রাশিয়া সমর্থিত বাহিনীর পাশাপাশি লড়তে মধ্যপ্রাচ্যে ১৬,০০০ স্বেচ্ছাসেবী আছে। এই স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে দক্ষ সিরীয় যোদ্ধারা থাকতে পারে, বলছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউক্রেনের পক্ষেও এখন কিছু ভাড়াটে যোদ্ধা আসতে শুরু করেছে। কিছু মার্কিন ও ব্রিটিশ সাবেক সেনা ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে আসছে বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয় শুক্রবার ইউক্রেনে ‘সর্বাত্মক হামলার’ তৃতীয় সপ্তাহে এসে আক্রমণের তালিকায় কয়েকটি নতুন শহরকে যুক্ত করেছে রাশিয়া।