কিশোর ফুটবলের খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে নানা অভিযোগ

বিচার হয় নিরাপরাধ শিশুদের, হোতাদের কিছু হয় না

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৪ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে যেকোন বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গেলেই একটা বিষয় নিয়ে সবচাইতে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়। তা হচ্ছে খেলোয়াড় বাছাই। যেহেতু ক্লাব সংস্কৃতি এখন আর নেই চট্টগ্রামের ফুটবলে, তাই যে সমস্ত কন্ট্রাক্টরদের হাতে নিজেদের ক্লাবটা তুলে দেন ক্লাবের কর্মকর্তারা সে সব কন্ট্রাক্টররা করেন নানা অপ কর্ম। খেলোয়াড়দের জাল সনদ সংগ্রহ, ছবি বদলে ফেলা, জন্ম নিবন্ধন সনদ জাল করা, খেলোয়াড়দের বাবা, মার ভোটার আইডি নকল করা থেকে এহেন কোন অপকর্ম নেই যা এইসব কন্ট্রাক্টররা করেননা। এরপর খেলা শুরু হলে আবার প্রটেস্টের জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করে সে সব কন্ট্রাক্টররা। কারন তারা জানে কোন কন্ট্রাক্টর কিভাবে এইসব অপকর্ম করে। আর মাঝখান দিয়ে বলির পাঠা হতে হয় কোমলমতি সে সব শিশু কিশোর খেলোয়াড়দের। তারা সাসপেন্ড হয়। কিন্তু যারা এইসব কোমলমতি শিশুদের চোর বানাল তাদের কিছু হয়না। তারা ঠিকই কর্মকর্তাদের কাঁধে হাত দিয়ে দিব্যি আরেকটা অপকর্মের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে।

চট্টগ্রামে এখন চলছে অনূর্ধ্ব১৩ একাডেমি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টেও কোন এক খেলোয়াড়ের বিপক্ষে প্রোটেস্ট হয়েছে। প্রোটেস্ট কমিটি সভা করে সেই খেলোয়াড়ের বৃত্তান্ত বের করতে দায়িত্ব দিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক কর্মচারীকে। অভিযোগ করা হয়েছে সেই খেলোয়াড় নিজের নাম বাদ দিয়ে আরেকজনের নাম দিয়ে খেলেছে। হয়তো সে খেলোয়াড় সাসপেন্ড হবে। বা খেলতে পারবেনা। কিন্তু মাত্র ১৩ বছর বয়সী এই শিশুকে যে চোর বানাল তার কি শাস্তি হবে। টুর্নামেন্টের প্রোটেস্ট কমিটির আহবায়ক এডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী জানালেন অবশ্যই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু টুর্নামেন্টের বাইলজে কি আছে সেটা দেখেইতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জেলা ফুটবল এসোসিয়শেনর সহ সভাপতি এবং খেলোয়াড় বাছাই কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম লেদুও মনে করেন এইসব অপকর্মের সাথে যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু তারাই যখন টুর্নামেন্টের বাইলজ প্রনয়ন করেন তখন সে শাস্তির কথা বাইলজে অন্তর্ভুক্ত করতে বেমালুম ভুলে যান। গত কয়দিন ধরে চলছে কিশোর ফুটবল টুর্নামেন্টের বাছাই কার্যক্রম। এই বাছাই কার্যক্রম নিয়েও উঠছে নানা অভিযোগ। একজন সামান্য ফিজিও দিয়ে খেলোয়াড়দের বয়স নির্ধারণ করা, একজন খেলোয়াড় এক ক্লাবের হয়ে বাতিল হয়ে যাওয়া আবার অন্য ক্লাবের জণ্য বৈধ প্রমাণিত হওয়া। এরকম নানা অভিযোগ উঠছে প্রতিনিয়ত। তবে বাছাই কমিটির প্রধান জানালেন তারা সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র দেখে বাছাই করে থাকেন। যেহেতু অনেক ছেলে আসে, তাই হয়তো ভিড়ের মাঝে দু একজন হয়তো এদিক ওদিক হয়ে যায়। তিনি বলেন তারা সব দলের জন্য সমান নীতি অবলম্বন করেন। ক্রিকেট বোর্ড কিংবা ফুটবল ফেডারেশন খেলোয়াড়দের যে বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করে সেখানে পরে ডাক্তারী পরীক্ষার সুযোগ থাকে। কিন্তু এখানে সেটি আছে কিনা তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে এতটাকা খরচ করে যেখানে টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয় সেখানে কয়টা টাকা খরচ করে কেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা যাবেনা। তাছাড়া জেলা সিভিল সার্জন অফিসে একটি চিটি দিলেই তারা ডাক্তার পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আয়োজকরা সে কাজটা করতে পারেনা। ফলে সাদা চোখে খেলোয়াড় বাছাইয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এমনিতেই বয়স ভিত্তিক যেকোন খেলাধুলায় বয়স নিয়ে নানা অভিযোগ থাকে। তবে যে বিষয়টি খুবই মারাত্মক আকার ধারন করছে ধীরে ধীরে তা হচ্ছে এইসব কোমলমতি শিশুদের কাগজপত্র নকল করে তাদের চোর বানানো হচ্ছে। যাদের ক্যারিয়ার কেবলই শুরু তাদেরকে এভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে । জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন এইসব কোচ কিংবা কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনা। কোপটা গিয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের উপর। ফলে অনেকের ক্যারিয়ারের শুরুটা ভেস্তে যায়।

এমনিতেই চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে অপরাধীদের শাস্তির তেমন নজির নেই। যাদেরকে সাসপেন্ড করা হয় তারা কদিন না যেতেই বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়। শুধু তাই নয়, আরো দ্বিগুন উৎসাহে নানা অপকর্ম করে থাকে। আজীবন নিষিদ্ধ হওয়াদের পাপও সেখানে সাফ হয়ে যায়। তাই ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন শুধু খেলোয়াড়দের শাস্তি নয়, বরং যেসব কর্মকর্তা এং কোচ এই অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের শাস্তির বিধান করাটাই জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ রাসেল একাডেমি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট জয় দিয়ে শেষ করল একরাম একাডেমি
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ২৬.৮৯ কোটি টাকা