কিলিং মিশনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার সজিবের

ছোট সাজ্জাদের আরো তিন সহযোগী গ্রেপ্তার, খুনে ব্যবহৃত বাইক উদ্ধার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বাকলিয়ায় প্রাইভেটকার ধাওয়া করে জোড়া খুনের ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের আরও তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার ও গতকাল সোমবার রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার গ্রেপ্তার যুবকের নাম মোহাম্মদ সজিব (২৯)। তিনি কিলিং মিশনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সজিব ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্য কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ছোট সাজ্জাদের অনুসারী বলে পুলিশ জানিয়েছে। নগরীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে জোড়া খুনের ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন জানান, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সজিবকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, ফটিকছড়ি কাঞ্চননগর এলাকার রাজা রাস্তার মাথা থেকে খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

গ্রেপ্তার সজিবকে গতকাল চট্টগ্রাম আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি জোড়া খুনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফা তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবিন্দতে মোহাম্মদ সজিব বলেছেন, উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলটি জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে এবং উক্ত মোটরসাইকেল তিনি নিজে চালিয়েছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তার পরবর্তী আদালতে হাজির করা হলে সজিব ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি ঘটনার সাথে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এদিকে গত রাতে ছোট সাজ্জাদের আরো দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। আরমান আলী রাজ (২৭) ও মোহাম্মদ আবদুর রশিদ (২৮) নামে ওই দুই সন্ত্রাসীকে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন ওয়াজেদিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।

তিনি বলেন, আসামিরা শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সহযোগী হয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অপরাধ সংঘটিত করে আসছিল। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, অস্ত্র, ছিনতাই, চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করায় বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তারপরও থেমে নাই। প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের ধরতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। অপরাধীদের স্থান আমার থানায় এলাকায় হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

উল্লেখ্য, ২৯ মার্চ গভীর রাতে বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকা থেকে একাধিক মোটরসাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা একটি প্রাইভেটকারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। প্রাইভেটকারটি বাকলিয়া এঙেস রোড দিয়ে প্রবেশ করে চকবাজার থানার চন্দনপুরায় পৌঁছানোর পর থেমে যায়। তখন বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। এতে দুজন নিহত ও দুজন আহত হন।

শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সরোয়ার হোসেন বাবলা সাজ্জাদকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেন বলে তার সন্দেহ ছিল। এজন্য সরোয়ারকে টার্গেট করে ছোট সাজ্জাদের অনুসারী সন্ত্রাসীরা কারে গুলিবর্ষণ করে। সেদিন ওই কারে চালকের পাশে সরোয়ার থাকলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এর আগে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে মোহাম্মদ বেলাল ও মানিক নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

জানা যায়, ছোট সাজ্জাদ ও সরোয়ার হোসেন বাবলার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্যের বিরোধ চলছে। সেই বিরোধে এর আগেও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এরপর সরোয়ার ও সাজ্জাদের বিরোধ নতুন মাত্রা পায়। জোড়া খুনের ঘটনায় গত রোববার ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

এদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত বখতেয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে গত ১ এপ্রিল নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। এতে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাহ আমানত বিমানবন্দরে যাত্রীর লাগেজে কোটি টাকার স্বর্ণ
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ চলছেই, আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত