কিরগিজিস্তানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ‘গুরুতর আহত’ হওয়ার খবর নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

| সোমবার , ২০ মে, ২০২৪ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

কিরগিজিস্তানের বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি গুরুতর আহত হওয়ার খবর না থাকার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের গভীর উদ্বেগ কিরগিজিস্তানকে জানিয়েছি, সেখানে যে বিদেশি ছাত্রদের উপর, বিশেষ করে বাংলাদেশি ছাত্রদের উপর যে হামলা হয়েছে, সেজন্য আমরা গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। কোনো বাংলাদেশি ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে বলে আমাদের কাছে সংবাদ আসেনি। সেখানে বাংলাদেশি ছাত্রদের উপর হামলা হয়েছে, গুরুতর আহত হয়েছেএমন কোনো সংবাদ আমাদের কাছে আসেনি। খবর বিডিনিউজের।

কিরগিজিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বিশকেকে ঢাকার প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামকে কিরগিজিস্তানে পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান হাছান মাহমুদ।

কিরগিজ সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ১৩ মে রাজধানী বিশকেকের একটি রেস্তোরাঁয় বিদেশিদের সঙ্গে কয়েকজন কিরগিজ নাগরিকের মারামারির একটি ভিডিও শুক্রবার ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় শত শত কিরগিজিস্তানি জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং এরপর মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে গিয়ে হামলা চালালে দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিবিসি কিরগিজের এক খবরে বলা হয়, বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় ‘এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার’ গুজব দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানান কয়েকজন বাংলাদেশিও। কিরগিজিস্তানে কোনো বাংলাদেশি দূতাবাস না থাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা কামনা করেন তারা। ওই রাতে হামলায় অন্তত ২৯ জন আহত হওয়ার কথা কিরগিজিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বিবিসি। হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়ে শনিবার রাতে একটি হটলাইন খুলেছে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস।

ওই হটলাইনের দায়িত্বে থাকা দূতাবাসের মিনিস্টার নাজমুল আলম গতকাল বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। তবে সবাইকে নিরাপদ থাকতে বলা হয়েছে। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের জানাতে বলা হয়েছে। আমরা এরপর দেশটির পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে পদক্ষেপ নেব। শিক্ষার্থীদের থেকে পাওয়ার তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি, কিরগিজিস্তানে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। আর প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা হবে এক থেকে দেড় হাজার।

বিশকেকের পরিস্থিতি এখন শান্ত হলেও এখনো শিক্ষার্থীদের আতঙ্কে থাকার কথা বলেছেন সেখানকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি জেরিত ইসলাম। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেলে অধ্যয়নরত এ শিক্ষার্থী বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত। স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিচ্ছে, আর স্থানীয় শিক্ষকরাও হোস্টেলে এসে অবস্থান করছেন। যেকোনো পরিস্থিতি তারা মোকাবেলা করলেও রাতে আতঙ্কটা বেশি। কেউ কেউ দলবদ্ধভাবে বেরিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারেএমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেজন্য স্থানীয়দের দলবদ্ধ অবস্থান দেখলেই বিদেশি শিক্ষার্থী ভয় পাচ্ছে।

পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফেরত আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশ নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরাও যেতে চায়। সেক্ষেত্রে চার্টার্ড ফ্লাইট হলে যাওয়াটা নিরাপদ হবে। কারণ, সেক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে না গিয়ে সবাই একসঙ্গে যেতে পারবে।

উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম বলেন, বিশকেকের পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে এবং সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এখন ভালো আছে। আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং পরিস্থিতি আগের থেকে উন্নত হয়েছে বলে তারা আমাদেরকে জানিয়েছে। রাষ্ট্রদূত মনিরুল বলেন, আমি কিরগিজিস্তানে দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করছি এবং সেখানকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করব। শিক্ষার্থীদের চার্টার ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। আমরা এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাব।

এদিকে কিরগিজিস্তানে দাঙ্গার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমদূরবর্তী হিসাবে কিরগিজ রিপাবলিকের দায়িত্বে থাকা উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দূতাবাস কিরগিজিস্তানে পড়ুয়া আমাদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিরগিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআ.লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হলেন পারেস
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কার্যকর আর্থিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য