কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১০ মার্চ, ২০২২ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

আজ ১০ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতিবছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার এ দিবস পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হল, ‘সকলের জন্য কিডনি স্বাস্থ্য’। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। পাঁচ বছর আগে ডায়ালাইসিস খরচ ছিল ১৫০০-২০০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ৩-১০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া পরীক্ষা খরচ ও ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ কম থাকলেও অপ্রতুলতায় সেই সেবা পাচ্ছেন না বেশিরভাগ রোগী। ফলে কিডনি সমস্যায় আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ হাজারের কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে প্রতিবছর। ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপন ছাড়া এ রোগের বিকল্প কোনো চিকিৎসা নেই।
কিডনি রোগবিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ভাস্কুলার বা রক্তনালির রোগাক্রান্তদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। তাই এসব রোগীর ক্রনিক কিডনি ডিজিজের পরীক্ষার (স্ক্রিনিং) আওতায় রাখা প্রয়োজন। কারণ, একটি বড় অংশের রোগী, যাদের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ প্রাথমিক পর্যায়ে (স্টেজ ১-৩) ধরা পড়ে, তাদের চিকিৎসার আওতায় রাখলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে না। এই চূড়ান্ত স্তরে কিডনি প্রতিস্থাপন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, কিডনি রোগ দুই ধরনের হয়। একটি হঠাৎ হয় এবং অন্যটি দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও বোঝা যায় না। এ দুটিই প্রতিরোধ করা যায়। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে কিডনি সমস্যা হবে না। জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা ঠিক না। এতে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। নিয়মিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। কিডনি রোগের আরেকটি কারণ হলো ব্যথানাশক ওষুধ সেবন। একমাত্র প্যারাসিটামল ছাড়া যেকোনো ব্যথার ওষুধের ৮০ ভাগই কিডনির ক্ষতি করে।
বারডেম হাসপাতালের কিডনি বিভাগের এক অধ্যাপক তাঁর চিকিৎসা দেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, রোগীদের পরিবারগুলোকে এই ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হয়। শেষ পর্যায়ে কিডনি বিকল হওয়ার কারণে যত রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়, তার ৯০ ভাগ রোগীই এক বা দুইবার ডায়ালাইসিস করার পর আর এটা করাতে পারে না। কারণ এর ব্যয় সামলাতে পারে না। ১০ভাগের কম লোক এটার ব্যয় ভার বহন করতে পারে। এছাড়া কিডনি প্রতিস্থাপন করার ব্যয় কিছুটা কম হলেও এর ডোনার পাওয়া যায় না।
কিডনি ফাউন্ডেশনের এক বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, ব্যয়ের বিষয়টা যেমন আছে, তেমনি কিডনি রোগের শেষ অবস্থার রোগীদের জন্য দেশে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধাও এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বছরে ৪০ হাজার রোগীর যে কিডনি বিকল হচ্ছে তাদের সবার চিকিৎসা দিতে চাইলে মানসম্মত হাসপাতালের পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যাপ্তিটা দরকার। এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে নতুন ৪০ হাজার রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া এবং প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ৮০ভাগ রোগীই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের যে সুযোগ সুবিধা আছে, তাতে আমরা ৪০ হাজার রোগীর মাত্র ২০ভাগকে ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপন করে দিতে পারি। কিডনির চিকিৎসা বিস্তারে কমিউনিটি হাসপাতালগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং বলেন, লাভজনক সেন্টারগুলোতো এটা চিন্তাও করে না যে, একজন রোগীকে কত কম খরচে চিকিৎসা দেয়া যাবে। অলাভজনক যেসব সেন্টার আছে, সেগুলো খুবই অপ্রতুল। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা- এমন সাত আটটা শহরে কিছু কিছু ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে এবং সেটা একেবারে নগণ্য। গ্রাম পর্যায়ে এখন এটা চিন্তা করা খুব দুস্কর। কোনোমতেই বাংলাদেশে আগামী ২০ বছরে সব কিডনি রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। তবে একটা অবকাঠামো আছে, সেটা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। এই কমিউনিটি ক্লিনিকে যদি উদ্যোগ নেয়া যায়, তাহলে আমরা কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ-এসব রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিডনির চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসার ইউনিট করা এবং চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনার ব্যাপারে বিভিন্ন পরিকল্পনা বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অপ্রতুলতার কথাও তুলে ধরছেন। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টানোর বিষয়ে চিকিৎসকদের সন্দেহ রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন সাধারণ মানুষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে