একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, দেশে দুরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যয়বহুল এ চিকিৎসায় অনেকে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। আবার আর্থিক সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে অনেকে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। অন্যদিকে উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের এ রোগের চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ।
তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত ‘কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক এস এম জাহেদুল হক এর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। সংস্থার সভাপতি ও দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেকের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার আজীবন সদস্য ও মানবাধিকার নেতা এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, জাহেদুল হক আমাদের একটি সুন্দর এবং পবিত্র দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। বিশ্বাস করুন, আমার এবং আমার পরিবারের যতটুকু সাধ্য আছে সেটা দিয়ে আমরা চেষ্টা করব সেই দায়িত্ব পালন করতে, এই ফাউন্ডেশন থেকে যেন অসুস্থ কিডনি রোগীরা যথাযথ সেবা পান। তিনি বলেন, জাহেদুল হক ছিলেন আপাদমস্তক একজন মানবতাবাদী মানুষ। অত্যন্ত কর্মঠ এই প্রাণবন্ত মানুষটি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পেশাগত কাজ ও পারিবারিক দায়িত্ব সম্পাদনের পাশাপাশি মানবসেবায় সবসময় নিজেকে পরিব্যাপ্ত রাখতেন। দীর্ঘ এক দশক নিজের শরীরে মরণব্যাধি কিডনি রোগ বহন করেও কাউকে বুঝতে দেননি। রাত–দিন পরিশ্রম করতেন। সবসময় ভাবতেন কিডনি রোগীদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। সেই বোধ থেকেই তিনি কিছু সুহৃদকে সাথে নিয়ে গঠন করেন কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি সমাজের অবস্থা সম্পন্ন লোকদের কাছ থেকে অনুদান ও যাকাতের অর্থ সংগ্রহ করে অসংখ্য কিডনি রোগীর চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে নগদ অর্থ প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসা সংক্রান্ত নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করতেন।
এ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহিদ মালেক বলেন, জাহেদ ভাই যখন এই প্রতিষ্ঠানের (কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা) সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে আসেন তখন আমি না বলতে পারিনি। দৈনিক আজাদী যে কোনো ভালো কাজের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে চট্টগ্রামবাসীর সেবার জন্য আমরা থাকার চেষ্টা করেছি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকব। এসময় কিডনি রোগীর চিকিৎসায় চট্টগ্রামে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় চট্টগ্রামবাসীর সহযোগিতার প্রয়োজন হবে বলেও জানান তিনি।
কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাব্বির আহমদ ও অর্থ সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ হোসেনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংস্থার আজীবন সদস্য মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, আশরাফুল হক জীবন, মুহাম্মদ ওবায়দুল হক মনি, মোহাম্মদ মোকাম্মেল হক খান, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, নিতাই চন্দ্র দাশ, ডা. দুলাল দাশ, ডা. এ কে এম ফজলুল হক ছিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার ফান্ডে এক লাখ টাকার নগদ অনুদান প্রদান করেন।
অনুষ্ঠান শেষে লায়ন এম এ মালেক ওয়াহিদ মালেককে সভাপতি, এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসানকে সিনিয়র সহ–সভাপতি ও অধ্যাপক শাব্বির আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন।