কিডনি চুরির অভিযোগে স্ত্রী ও ছেলেসহ ডা. রবিউল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা

পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ আদালতের

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ জুলাই, ২০২৪ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

টিস্যু নেওয়ার ছলে প্রতারণার মাধ্যমে এক কৃষকের কিডনি চুরির অভিযোগে দুই চিকিৎসকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন, বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রবিউল হোসেন, তার ছেলে ডা. রাজীব হোসেন ও ডা. রবিউল হোসেনের স্ত্রী খালেদা বেগম। চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার বাসিন্দা তারা। থাকেন নগরীর জাকির হোসেন রোডের চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্সের স্টাফ কোয়ার্টারে। ডা. রবিউল হোসেনের জন্য টিস্যু নেওয়ার কথা বলে কৃষক আবু বক্করের শরীর থেকে অপারেশনের মাধ্যমে কিডনি চুরি করার অভিযোগ আনা হয় উক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে। গতকাল (রোববার) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়ার আদালতে কৃষক মো. আবু বক্কর মামলাটি দায়ের করেন। তিনি বায়েজিদ থানার ওয়াজেদিয়া আলী হোসেন মিস্ত্রি বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

কৃষক আবু বক্করের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিচয়ের সূত্র ধরে আমার মক্কেলকে অ্যাটেন্টডেন্ট হিসেবে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং টিস্যু নেওয়ার ছলে প্রতারণার মাধ্যমে অপারেশন করে তার ডান পাশের কিডনি নিয়ে নেওয়া হয়। নগরীর শেভরণ হাসপাতালে আলট্রাসোনাগ্রাফি করালে সেখানে বিষয়টি উঠে আসে। রিপোর্টে দেখা যায়, বাদীর ডান পাশের কিডনি নেই। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, বিবাদীরা প্রতারণার মাধ্যমে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়ে অপারেশন করে তার ডান পাশের কিডনি নিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বাদীকে ৩০ লাখ টাকায় সমঝোতার প্রস্তাব দেন এবং এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নিষেধ করেন। পরে টাকার জন্য গেলে বাদীকে গালাগালি করা হয় এবং নানা রকম হুমকি দেওয়া হয়। মূলত এ জন্যই আমার মক্কেল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বাদী মো. আবু বক্কর আজাদীকে বলেন, কিডনি নেওয়ার পর ডা. রবিউল হোসেনের শরীরে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মামলার আরজিতে বলা হয়, পরিচয়ের সুবাদে চিকিৎসক ডা. রাজীব হোসেন তার বাবা ডা. রবিউল হোসেনের সাথে বাদী আবু বক্করের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় সিঙ্গাপুরে ডা. রবিউল হোসেনকে চিকিৎসা করানো এবং তাদের একজন অ্যাটেন্টডেন্ট প্রয়োজনের কথা জানানো হয় আবু বক্করকে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তখন আবু বক্কর তাদের সাথে অ্যাটেন্টডেন্ট হিসেবে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হন। ২০১২ সালের ১০ মার্চ ডা. রবিউল হোসেন, তার স্ত্রী খালেদা বেগম, ডা. রাজীব হোসেনসহ তিনি সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে পৌঁছে ডা. রবিউলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা তিনজন হোটেলে অবস্থান করেন। পরে ডা. রাজীব হোসেন মামলার বাদীকে জানান যে, তার বাবার অবস্থা ভালো না। তাকে সুস্থ করতে হলে যেকোনো মানুষ থেকে কিছু টিস্যু দিতে হবে। টিস্যু দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বলেও ওই সময় ডা. রাজীব তাকে আশ্বস্ত করেন। বাদীকে টিস্যু দেওয়ার অনুরোধ করেন ডা. রাজীব। বাদী মানবিক বিবেচনায় টিস্যু দিতে রাজি হন। পরে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার পর ডা. রবিউলের সঙ্গে বাদীর টিস্যুর মিল আছে জানিয়ে বাদীকে অপারেশনে রাজি করানো হয়। একপর্যায়ে ৩ এপ্রিল বাদীকে হাসপাতালে ভর্তির পর অপারেশন করা হয়। ৯ এপ্রিল তাকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়। একই বছরের ১৫ এপ্রিল বাদীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আরজিতে বলা হয়, টিস্যু দিয়ে জীবন বাঁচানোর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বাদীকে আসামিদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেঙে চাকরি দেওয়া হয় এবং ২০১৭ সালে শারীরিক দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখিয়ে বাদীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর দিনে দিনে বাদীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ মে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি নগরীর শেভরণ হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাফি করান। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তাকে চিকিৎসক জানান, তার ডান কিডনি নেই। চিকিৎসক মতামত দেন, সার্জারির মাধ্যমে তার ডান কিডনি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

আরজিতে আরো বলা হয়, কিডনি সরিয়ে ফেলার বিষয়টি জানার পর আবু বক্কর বিবাদীদের কাছে গেলে তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাউকে বিষয়টি না জানাতে বলা হয়। কিন্তু গত ১৩ জুন বাদী টাকার জন্য বিবাদীদের বাসায় গেলে উল্টো তার সাথে খারাপ আচরণ করা হয় এবং নানা রকম হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার পর কৃষক আবু বক্কর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বলে আরজিতে উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধকোটার সমাধান আদালতে