কিছু মহল চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় : প্রধানমন্ত্রী

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

পণ্যমূল্য নিয়ে মানুষ যে কষ্টে আছে, সেটি অজানা নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেবে। এও বলেছেন যে, কিছু মহল চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। আগামী মার্চে শুরু হওয়া রোজাকে সামনে রেখে যা যা দরকার, তার সব এখনই কিনে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভার শুরুতে এ কথা বলেন দলীয় সভাপতি। তিনি বলেন, এখনকার মানুষের সবচেয়ে কষ্টের জিনিস হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। হ্যাঁ, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, আমরা এটা অনেক কমিয়ে এনেছি। কিছু কিছু মহল আছে যারা চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাও সত্যি, আগে এত ক্রয় ক্ষমতা ছিল না।

মূল্যস্ফীতি যাতে আরও কমানো যায় সেই জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি, খাদ্য উৎপাদন আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তারপরেও সারা বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা, সেখানে আমরা তার থেকে দূরে না। আমি সবসময় এটাই আহ্বান করেছি, যেন এক ইঞ্চি জায়গাও অনাবাদী না থাকে, আমাদের খাদ্যের যেন অভাব না হয়। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে, রপ্তানির ক্ষেত্র বহুমুখী করতে হবে। পাট, চামড়াসহ আমাদের যে সমস্ত পণ্য আছে, এর জন্য বাজার খোঁজা, জনসাধারণকে ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা, বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে চাই।

স্বল্প আয়ের মানুষদের কষ্ট লাঘব করতে সরকারের উদ্যোগের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা টিসিবি কর্তৃক পারিবারিক কার্ড করে দিচ্ছি, যাতে কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে, অর্থাৎ মানুষের যাতে কষ্ট না হয়। সামনে রোজা, রোজার জন্য যা দরকার সবই আমরা আগাম ক্রয় করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আর আমরা সবসময় যারা হতদরিদ্র, তাদের জন্য বিনা পয়সায় খাদ্য সাহায্য দিয়ে আসছি, সেই ব্যবস্থাও থাকবে। তাছাড়া টিসিবি কার্ড দেওয়া থাকবে।

পণ্যমূল্য যেন কম থাকে, আবার কৃষকও যেন লোকসানে না পড়ে, সে বিষয়েও দৃষ্টি থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের দাম বেশি থাকলে কৃষক খুশি হয়, আবার যারা ক্রেতা, তারা নাখোশ হয়। এখানে একটা ভারসাম্য যেন থাকে, সেদিকে দৃষ্টি থাকতে হবে।

নির্বাচনে নিজেদের দোষ ধরা বন্ধ করুন : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে একজন আরেকজনের খুঁত খুঁজে না বেড়াতে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে হেরেছেন, তাদের প্রতিও একই পরামর্শ রেখেছেন তিনি।

তিনি সতর্ক করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা যদি নিজেরা দোষ খুঁজতে থাকে, তাহলে তা বিরোধীদের আরও উৎফুল্ল করবে। গত ৭ জানুয়ারির ভোটে নৌকা নিয়ে লড়াই করা আওয়ামী লীগ বা তার জোটের শরিক দলের একাধিক প্রার্থী কারচুপির অভিযোগ আনার মধ্যে দলের যৌথসভায় এ কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের দোষ না খোঁজার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচনটা যাতে না হয় এটা নিয়ে অনেক চক্রান্ত ছিল, অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচনটা করেছি। আমরা নির্বাচনে সবসময় মনোনয়ন দিয়েছি, আর আমাদের বড় দল, অনেকেই নির্বাচন করতে চায়, সেই জন্য নির্বাচনটা আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। সেখানে কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সেক্ষেত্রে আমি একটা অনুরোধ করব, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী দোষ ছিল খুঁজে বের করা, এগুলো বন্ধ করতে হবে। কাউকে বেশি দোষারোপ করা এবং একে অপরের দোষ ধরা নিয়ে যদি ব্যস্ত থাকি, তাহলে এটা কিন্তু আমাদের বিরোধী দলকে আরও উৎফুল্ল করবে।

ইশতেহার বাস্তবায়ন হবে : নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বাজেট প্রণয়নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষকে যে ওয়াদা দেই তা বাস্তবায়ন করি। আসছে যে বাজেট, সেখানে আমরা কী ওয়াদা দিয়েছি, ভবিষ্যতে আমরা কী করব, তা থাকবে। বাংলাদেশের কল্যাণ আওয়ামী লীগের হাতে। এই আওয়ামী লীগই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের ওয়াদা বাস্তবায়ন করেই কিন্তু বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি। কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

হেরে যাবে জেনেই ভোটে আসেনি বিএনপি : পরাজয় জেনেই বিএনপি নির্বাচনে আসেনি বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আসলে আমাদের বিরুদ্ধে যে দল, তারা তো গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন করে অভ্যস্ত না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যেসব জরিপ হয়েছিল, সেখানে বিএনপি তাদের জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে সরকার গঠন করবে না, সেই সংখ্যক সিট তারা পাবে না, এটা উঠে এসেছিল। একমাত্র আওয়ামী লীগই সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সিট পাবে, সেই কথা শোনার পরে তারা নির্বাচনে আসবে না, এটা তো স্বাভাবিক।

বিএনপির জন্মের পর নির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওদের সৃষ্টি হচ্ছে অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, জনগণের ভোট চুরি করে। এসব কালচার তো বিএনপির আমলেই সৃষ্ট। দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা, এটাই তো বিএনপির চরিত্র, এটাই তারা পারে।

বিএনপিকে নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা রেল গাড়িতে আগুন দিয়ে মা শিশুকে মারে, যারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারে, যারা ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ মারে, ওই অগ্নিসন্ত্রাসীদের থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর মিথ্যাচার এই দেশের ভামূর্তি নষ্ট করে। তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুমোদন : আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রথম বৈঠকে বসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা। দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের জন্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুমোদন করা হয়েছে এ বৈঠকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল তার কার্যালয়ে এ বৈঠক বসে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার পূরণে কর্মপরিকল্পনা নিতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে আসেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে সচিব বলেন, বিশেষ করে আগামী রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য ও রোজা সংশ্লিষ্ট পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়া হয়েছে সেটা অনুযায়ী সব মন্ত্রণালয় যেন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়। কৃষি উৎপাদন যেন কোনো অবস্থায় ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর দিতে বলেছেন। কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরি করারও নির্দেশনা দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেই কিশোর গ্যাং চক্রের ১৭ সদস্য অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধতারের জঞ্জালমুক্ত হচ্ছে তিন ওয়ার্ড