কিছু পক্ষ অনির্বাচিতদের দিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চায় : বিএনপি

| শুক্রবার , ১ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

পিআর পদ্ধতিতে কিছু পক্ষ অনির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলছেন, আমরা প্রস্তাব করেছি, উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে, কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না। উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি, কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিন করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের চাবিরতির সময় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সনদে শুধু কমিশন নয়, সব রাজনৈতিক দল সই করবে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্য। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়। এটি আইনের চেয়েও বড়। জনগণের এ প্রত্যাশা (সংসদের মাধ্যমে) সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার অঙ্গীকার আমরা করেছি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি তুলেছে। এ স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই সনদে সই না করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে তারা। এমনকি সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও এসেছে জামায়াতের পক্ষ থেকে। কিন্তু বিএনপি এখনই এর সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে।

ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিটি দলকে প্রস্তাব সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলাম। আমরা সংশোধন করে দিয়েছি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধান ও অন্যান্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে আমরা তা করব।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে বিএনপির চিন্তাভাবনা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।

তিনি বলেন, সংবিধানের ৪৮() অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বর্তমানে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষমতার বাইরে রাষ্ট্রপতির আরও কিছু দায়িত্ব থাকা উচিত বলে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনার পর তা প্রকাশ করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।

মৌলিক অধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চিন্তা করছি বিদ্যমান মৌলিক অধিকারের সঙ্গে আধুনিক সময়ের আলোকে কিছু অধিকার, যেমন ইন্টারনেটের অধিকার যুক্ত করা যায় কি না। তবে মৌলিক অধিকার একবার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কারণ সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে থাকা অধিকারগুলো সেল্ফ এনফোর্সেবল এবং ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকরা তা প্রয়োগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। তাই অত্যন্ত সচেতনভাবে নতুন কোনো অধিকার সংযোজন করতে হবে। আমরা আগেই জানিয়েছি, পঞ্চম সংশোধনের মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাক্যটি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা একমত। এতে বলা হয়েছেসাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। তবে কিছু দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা বিতর্ক করব, মতপ্রকাশ করব, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য গড়ে তুলব। জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতেই আমরা এ সনদকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দর থেকে কাপড় ভর্তি কন্টেনার পাচারের চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত