সোহরাব হোসেন – নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী। দীর্ঘ আট দশক ধরে নজরুল সংগীতের সাধনায় নিজেকে নিমগ্ন রেখে সংগীতের এ শাখাকে সমৃদ্ধ করেছেন, খ্যাতি অর্জন করেছেন দেশে ও বিদেশে। সংগীত শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন একনিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রাণ।
সোহরাব হোসেনের জন্ম ১৯২২ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার আয়েশতলা গ্রামে। বাড়িতে গান বাজনার চর্চা ছিল না। কিন্তু শৈশবেই সোহরাব সুরের মায়ায় মোহিত হন। মাত্র নয় বছর বয়সে রানাঘাটের এক সংগীত আসরে নজরুল গীতি শুনে হয়ে ওঠেন এ গানের অনুরাগী ভক্ত। শৈশবে তাঁর সংগীতে হাতেখড়ি সংগীত শিক্ষক জয়নুল আবেদীনের কাছে।
॥পারিবারিক বিরাগ উপেক্ষা করে পরবর্তী সময়ে সংগীতগুরু কিরণ দে চৌধুরী, শিল্পী পূরবী দত্ত প্রমুখের কাছে তালিম নিয়েছেন। কিরণ দে চৌধুরীর মাধ্যমে শিল্পী সোহরাব হোসেন কলকাতার শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে গায়ক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৪৬ সাল থেকে এইচএমভি ও রেডিও-র শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। শিল্পী জীবনে সোহরাব শিল্পী আব্বাস উদ্দীন, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, আঙুরবালা, ইন্দুবালা, গিরীশ চক্রবর্তী, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, শচীন দেব বর্মন, অঞ্জলি মুখার্জি, কবি জসীম উদ্দীন প্রমুখ বিখ্যাত জনের সাহচর্য লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে শিল্পী ঢাকায় স্থায়ী হন এবং সরকারি তথ্য বিভাগের কাজে যোগ দেন। পাশাপাশি বেতারে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন এবং সংগীত শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও শিক্ষক ছিলেন তিনি। এছাড়া বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী ও নজরুল একাডেমীর শিক্ষক এবং নজরুল সংগীত প্রমাণীকরণ পরিষদ ও নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশের অনেক কৃতি শিল্পী তাঁর কাছে সংগীত শিক্ষা নিয়েছেন। বেশ কিছু আধুনিক গানও গেয়েছেন তিনি। কণ্ঠ দিয়েছেন ‘মাটির পাহাড়’, ‘যে নদী মরুপথে’, ‘গোধূলির প্রেম’, ‘শীত বিকেল’ ও ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছায়াছবিতে। সংগীত সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা পদক, নজরুল একাডেমী পদক সহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রয়াত হন কিংবদন্তি শিল্পী সোহরাব হোসেন।